বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া মা-মেয়ের অদ্ভুত বিবমিষাময় সম্পর্কের টানাপড়েনের চক্রে এই উপন্যাসটি এগিয়ে গেছে। নার্সিসাসের মতো সুন্দরী নারী মিলি রূপেরচ্ছটায় দিনরাত নিজেই উজ্জ্বলিত হয়ে থাকত। আচমকা অসুরের মতো কুৎসিত এক বদমাশ মন্টু তাকে তুলে নিয়ে গুলির মুখে বিয়ে করে। সে দুর্দান্ত টর্চারের মাধ্যমে মিলির সঙ্গে সেক্স করত। একসময় ক্রশফায়ারে সে মারা গেলে মুমূর্ষু গর্ভবতী মিলি বাড়ি আসে। জন্ম নেয় মিতুল। মিলি চোখ মেলে দেখে হুবহু মন্টুর মুখ। সে অজ্ঞান হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় বাবা-মার মৃত্যু হলে কিশোরী মিতুলকে নিয়ে সে বান্দারবান চলে যায়। যেখানে তার ভার্সিটির লাইফের এক বান্ধবী থাকে। মার সৌন্দর্য মিতুলের কাছে বিষ। নিজ রুমে একা একা গুমরায়। মেয়েকে সুখী করতে মিলি সব সজ্জা ত্যাগ করে। যন্ত্রণাকাতর বিভ্রমময় দারুণ ছবি আঁকিয়ে মিতুল মাঝেমধ্যে মিলিকে মা ডেকে তাকে আঁকড়ে ধরে। আর সমাজ যখন মা-মেয়েকে একসঙ্গে দেখে টিটকারি বিস্ময়ে বলে, এ আপনার সন্তান কীভাবে হয়, সে শত মাইল দূরে ছিটকে পড়ে। মা'র সঙ্গে মিতুল কোথাও যেতে ঘৃণা বোধ করে। শৈশবে মিলির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়া শান্তনুর সঙ্গে মিতুলের তুমুল বন্ধুত্ব হয়। মিতুল কিছুতেই চায় না শান্তনু মিলির সঙ্গে কথা বলুক। এইসব দিন চক্রে জাহাঙ্গীরনগরের চার হুজ্জত বন্ধু মিলি, নীলু, সুলতানা, শান্তনুসহ নীরব প্রেমিক জহির। এই উপন্যাসে সবার নানা কাণ্ডে আরও যুক্ত হয়েছে নীলু অধ্যায়ের রক্তাক্ত স্মৃতি।
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী। বাবার চাকরীর কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। ব্যক্তিগত জীবনে নাসরীন জাহান কবি আশরাফ আহমেদের স্ত্রী। লেখালেখির সূত্রেই তার সাথে পরিচয় এবং সে থেকে প্রণয়। ১৯৮৩ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে। নাম অর্চি অতন্দ্রিলা। নাসরীন জাহান পাক্ষিক পত্রিকা অন্যদিনের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উড়ুক্কু উপন্যাসের জন্য ১৯৯৪ সালে ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।