প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ছোঁয়ায় ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন ও যে কোন ব্যবস্থাপনাকে মানুষ সবসময়ই একটা ক্রমাগত রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রূপান্তরে ব্যাপকতা এসেছে। অভাবিত গতিতে আমরা চতুর্থ শিল্পবিল্পব নামক একটা প্রযুক্তিগত বিপ্লবের দিকে যাচ্ছি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের জীবনযাত্রা, কাজ করার এবং একের সঙ্গে অপরের সম্পর্কিত হওয়ার মৌলিক পদ্ধতিগুলো আমূল পরিবর্তন করে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা গত দিক থেকে এটি মানব বিকাশের একটি নতুন অধ্যায় যেখানে পণ্য ও সেবার চাহিদা-নকশা, শিল্প উৎপাদন ও বাজারজাতকরণকে সংজ্ঞায়িত ও নিয়ন্ত্রিত করবে তথ্য, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক অটোমেশন। বহু ধারার ফিউশন প্রযুক্তির সমন্বয়ে ঘটমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বৈশিষ্ট্যগতভাবে জীবন ও ব্যবসার শারীরিক, ডিজিটাল ও জৈবিক ক্ষেত্র গুলোর মধ্যে আশ্চর্যজনক সমন্বয় করবে, এদের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনবে কিংবা কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পর্কগুলো আরও জটিল ও অনিয়ন্ত্রিত করে তুলবে। বাংলাদেশ মূলত কৃষি শ্রমিক, তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিক-এই তিন ধরনের স্বল্প দক্ষ মানবসম্পদ দ্বারা চালিত অর্থনীতির দেশ। আমাদের অবকাঠামো, শিক্ষাব্যবস্থা, বৈদেশিক শ্রম বাজার ও সার্বিক কর্মসংস্থান- চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অটোমেশনে পড়ে কি ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, এই উপলব্ধি গুলোই এই পুস্তকের মূল আলোচ্য বিষয়। আমাদের অদক্ষ-স্বল্প দক্ষ শ্রমবাজারকে রূপান্তরিত করে যুগপোযুগি ও কারিগরিভাবে দক্ষ করা, বর্তমানের অর্জনগুলোর চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি নির্ণয়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন কর্মসংস্থান সম্ভাবনা আবিষ্কার, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল তৈরি, অবকাঠামো তৈরির চ্যালেঞ্জ নেয়া এবং একটা কর্মসংস্থান মূখী টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়া- এই পুস্তকের পর্যালোচনার বিষয়। একটা শিল্প বিপ্লবের গতি, পরিসর এবং গভীরতা ঠিক কীভাবে বিকশিত করা উচিত, তা নিয়ে বিশ্বের দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ দরকার। নতুন প্রযুক্তিগুলোর প্রয়োগ কীভাবে শ্রম বৈষম্য ও আর্থ-সামাজিক ঝুঁকি হ্রাস করবে, মানবিক মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করবে- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন উপলব্ধি তৈরির গুরুত্বও দেয়া হয়েছে এই পুস্তকে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ, ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম (মনোহরগঞ্জ) উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক। তিনি ১৯৯৭ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়ন করেন। ২০০৫ থেকে অদ্যাবধি টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সফটওয়্যার সল্যুশন আর্কিটেক্ট হিসেবে ‘ভোডাফোন জিজ্ঞো’ নেদারল্যান্ডস-এ কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে তিনি এলকাটেল লুসেন্ট বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া বাংলাদেশ একটেল (বর্তমান রবি), এমটিএন কমিউনিকেশনস নাইজেরিয়া, এরিকসন নাইজেরিয়া, এরিকসন ঘানা, এরিকসন দক্ষিণ কোরিয়া, এরিকসন নেদারল্যান্ডস এ কাজ করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। জনাব ফয়েজ তৈয়্যব একজন ‘টেকসই উন্নয়ন ও অবকাঠামো’ বিষয়ক প্রবন্ধকার। টেকসই উন্নয়নের নিরিখে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের কাঠামোগত সংস্কার, সুশাসন, প্রতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং প্রযুক্তির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধানের পর্যালোচনা করে থাকেন। তিনি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। তাই এসকল বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মুক্ত চিন্তা স্বাধীন ভাবে প্রকাশের প্রয়াস করেন। তাঁর লিখায় যা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায়ঃ সাস্টেইনএবল ডেভেলপমেন্ট এর নিরিখে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগত দিক, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের ডিজাইন ত্রুটি, অর্থনীতি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি ইত্যাদি খাতের কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারিগরি প্রস্তুতি, ম্যাক্রো ও মাইক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টের কারিগরি দিক এবং অটোমেশন। সামাজিক সংযোগের দিক থেকে উনি একজন টেকসই উন্নয়ন কর্মী, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। গ্রীণপিস নেদারল্যান্ডস এর সদস্য। দৈনিক বণিকবার্তা, দৈনিক শেয়ারবিজ ও দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের উপসম্পাদকীয় কলাম লেখক।