"নাইন-ইলেভেন" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: নাইন-ইলেভেন আমাদের সময়ের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী ঘটনাগুলাের অন্যতম। সারা দুনিয়ার রাজনীতির ইতিহাস বদলে দিয়েছে এই ঘটনাটি। বাংলা ভাষায় নাইন-ইলেভেনের সেই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী ঘটনার উপর নির্মোহ ভাষ্যের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের একটা অংশের মানুষ এই ঘটনাটিকে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখতে চায় আর আরেকটি অংশ ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ করে একেবারেই পশ্চিমা বুলিবাগিশতা দিয়ে। এই দুই প্রধান ধারার বিপরীতে খুব নির্মোহ ও ক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণ যারা করে থাকেন, তারা সত্যিই সংখ্যা লঘু।। পশ্চিমেও এই মানুষদের সংখ্যা খুব বেশি নয় যারা এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলােকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে চুলচেরাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, সেই বিরল মানুষদের একজন হচ্ছেন অধ্যাপক নােম চমস্কি। বিন লাদেন ও তার দলের করা এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার বিপরীতে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা কী করেছে? আমেরিকা ও ব্রিটেনের নেতৃত্বে। পশ্চিমা দুনিয়া এই জঘন্য হামলার প্রতিশােধ নিয়েছে যেভাবে, তার স্বরূপ কেমন? সন্ত্রাসবাদকে রুখতে সারা দুনিয়াব্যাপী সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক? আমেরিকা ও ব্রিটেনের নেতৃত্বে সারা বিশ্বব্যাপী যে ‘ওয়ার অন টেরাের’, কেন এই পদ্ধতি সন্ত্রাসবাদ না কমিয়ে বরং ছড়িয়ে দিলাে সারা দুনিয়াতেই? এই ধরনের প্রশ্নগুলাের আগ্রহােদ্দীপক বিশ্লেষণ হাজির করেছেন নােম চমস্কি তার নাইন-ইলেভেন বইয়ে। নাইন-ইলেভেন নিয়ে পশ্চিমাদের বিলিয়ন ডলার প্রােপাগান্ডার বিপরীতে একটা নির্মোহ, ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে এই বইটিতে।
নোম চমস্কি অধ্যাপক নোম চমস্কি এমআইটির ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক। ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত কাজ রয়েছে। কিন্তু সেই পরিচয় ছাপিয়ে অধ্যাপক চমস্কি হয়ে উঠেছেন আমাদের এই শতকের প্রধান রাজনৈতিক ঐতিহাসিক ভাষ্যকার। নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ নানান মূলধারার ও বিকল্প মাধ্যম তাকে চিহ্নিত করেছে এই শতকের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক হিসেবে। তাকে ‘আমাদের সময়ের নায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেছে নিউ স্টেটসম্যান পত্রিকা। তিনি জন্মেছিলেন ১৯২৮ সালের ৭ই ডিসেম্বর, একটি শরণার্থী ইহুদি পরিবারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার এক্টিভিস্ট বা সক্রিয়তাবাদী ভুমিকা। সেই সময়ই, ১৯৬৭ সালে তিনি লেখেন এক ঐতিহাসিক প্রবন্ধ, ‘The responsibility of intellectuals’ এই প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের একজন প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হন এবং সেই থেকে গত অর্ধ শতকের অধিক সময় ধরে তিনি বিশ্ব রাজনীতির প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সরব থেকেছেন। বলাই বাহুল্য, তার পক্ষচারণ সবসময়ই গণমানুষের পক্ষে, সাম্রাজ্যবাদ ও পশ্চিমা শোষকশ্রেণির বিপক্ষে।