ঝর্না রহমানের গল্পের আমি আগ্রহী পাঠক। তাঁর বেশ কিছু লেখা আমি আগেই পড়েছি, কয়েকটি লেখা আমাদের ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘নতুন দিগন্তে’-তে সোৎসাহে প্রকাশ করেছি, যেগুলো পড়ে পাঠকরা খুশি হয়েছেন। তাঁর গল্প পাঠককে নাড়া দেয়। যে এগারোটি গল্প নিয়ে এই সংকলন তাদের প্রতিটির সময় ও ঘটনা একাত্তরের। আমাদের একাত্তরের ইতিহাস আমরা গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে, কবিতায়, স্মৃতিকথায়, সাহিত্যিক প্রবন্ধে যেভাবে পাব অন্য কোথাও সেভাবে পাব না। কাঙ্ক্ষিত সেই লেখার একটি সংকলন মুক্তিযুদ্ধের গল্প: আয়নামামি বইটি। ঝর্না রহমানের নিজের লেখার সাহিত্যিক গুণগুলো এখানে সুন্দরভাবে পাওয়া যাবে। সব কটি কাহিনিই হৃদয়বিদারক; কিন্তু তিনি সেগুলো লিখেছেন সংযমের সঙ্গে। কোথাও আতিশয্য নেই, নেই ভাবালুতা। পর্যবেক্ষণকে তিনি যুক্ত করেছেন কল্পনার সঙ্গে। খুঁটিনাটি ঘটনার উপস্থাপনা মানুষগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছে, কিন্তু তা কাহিনিকে মোটেই ভারাক্রান্ত করেনি। ঝর্না রহমান গল্প বলেন খুব সুন্দর করে। গুছিয়ে। কাহিনি কৌতূহলের সৃষ্টি করে, উৎকণ্ঠা জাগায়। উল্লেখযোগ্য তাঁর ভাষাও। সেখানে উপমা আছে যথাযথ, শব্দব্যবহার প্রাণবন্ত। সবচেয়ে জীবন্ত হচ্ছে সংলাপ। চরিত্রগুলো প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায় কথা বলে। সবােই তারা দুঃখাহত, কিন্তু আবার স্বতন্ত্রও। -সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
চল্লিশ বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত একুশে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় ছোটগল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, কবিতা, ভ্রমণ-শিশুসাহিত্য, সবক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ। গল্পকার হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। পেশাগত জীবনে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী। বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ লাভ করেন। জন্ম ২৮ জুন, ১৯৫৯, গ্রামে বাড়ি : কেওয়ার, মুন্সিগঞ্জ।