হাঁটছে জরী। ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটছে। এলােমেলাে হয়ে আছে তার চুল। লম্বা চুল এলাে হয়ে ছড়িয়ে আছে তার পিঠের ওপর। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার ভেদ করে হঠাৎ করেই উকি দেয় পূর্ণ চাঁদ। জরীর ভয় কেটে যায়। কেন যেন একটা খুশি খুশি ভাব ছড়িয়ে পড়ে মনে। পায়ের নিচে পড়ে শুকনাে পাতার মচমচ করে ভাঙার শব্দ ছাড়া। আর কোন শব্দ এতােক্ষণ ছিলাে না। হঠাৎ করেই তার পেছন থেকে একটা কুকুর তারস্বরে কেঁদে উঠলাে। জরীর ঘাড়ের লােম দাঁড়িয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। ও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে, টের পাচ্ছে সে। নিজের হৃদপিণ্ডের শব্দ সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট। কোত্থেকে যেন একফালি মেঘ এসে চাঁদটাকে আড়াল করে ফেলেছে। আধাে আলাে আধাে অন্ধকারে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে খুব সন্তর্পণে পা ফেলে ফেলে এগােচ্ছে জরী। “আর একটুখানি”, ফিসফিস করে নিজেকেই শােনায় সে। “আর একটুখানি গেলেই সেই ইট রঙের বাড়িটা রাস্তার পাশে পড়বে। তারপর আমি সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারবাে” বলে এগােতে থাকে জরী। কিন্তু প্রচণ্ড ভয়ে তার বুক কাঁপছে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে, ভীষণ খারাপ কিছু। একটা কিছু সেই বাড়িতে তার জন্য। অপেক্ষা করছে কিন্তু তার সেখানে না গিয়েও উপায় নেই। হঠাৎ করেই তার বাম পাশে এসে পড়ে সেই বাড়িটা। রাস্তার পাশে দাঁড়ায় জরী। কতাে অসংখ্যবার এই বাড়িটা সে দেখেছে। কখনাে ভেতরে ঢােকার সুযােগ পায়নি। ঢোকার আগেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সে পায়ে পায়ে বাড়িটার ভেতরে ঢােকার জন্য এগিয়ে যায়। সেইসময় কোত্থেকে যেন একটা বিরাট বড় কালাে কুকুর এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রাণ ফাটানাে চিৎকার করে ওঠে জরী। বাড়িটার দিক থেকে সরে যেতে যেতে সে দৌড়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। ছুটতে ছুটতে এসে পড়ে একটা বিশাল পুকুরের সামনে। থামতে সামান্য দেরি হয়ে গেলেই সে। পুকুরের পানিতে পড়ে যেতাে। অনেক গভীর সেই পুকুরের পানিতে ঠিক মাঝখানে পাক খেয়ে উঠছে সবুজ রঙের গাঢ় কুয়াশা। কুয়াশা ভেসে উঠছে পুকুরের অতল থেকে। ভেসে ভেসে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে সেই কুয়াশা। কিছু একটার আকৃতি ধারণ করতে শুরু করেছে সেই কুয়াশা। হঠাৎ করে সম্বিত ফিরে আসে তার। পালিয়ে যেতে হবে এখান থেকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। পেছনে ফিরে দৌড় দিতে গিয়ে আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে জরী। সেই দানবাকৃতির কালাে কুকুরটা বিশাল জিভ বের করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে, যেন অপেক্ষা করছে তার অমােঘ। নিয়তির! পিছনে ফিরে দেখে সে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে সেই কুয়াশা, এখনই। ঠিক সেইসময় কোত্থেকে যেন একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসে। তার মনে হয় কান্নার শব্দটা আসছে সেই বাড়িটার ভেতর থেকে। মরিয়া হয়ে কুকুরটার পাশ কাটিয়ে দৌড় দেয় জরী। আর সেইসময় পেছন থেকে তার পায়ে দাঁত বসিয়ে দেয় কুকুরটা। আর্তচিল্কার করে। ওঠে জরী।
মৌলী, যার নামের অর্থ হলো পর্বতশীর্ষ বা পাহাড়ের চূড়া। জন্ম ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বসবাস ঢাকায়। মা-বাবার প্রথম সন্তান, এক কন্যার জননী। পেশায় ডক্টর, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করে বর্তমানে শিশু মেডিসিন বিষয়ে এফসিপিএস কোর্সে অধ্যয়নরত। হলিক্রস স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন। নেশা পড়া, উইপোকার মতো পুরির ঠোঙা থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত সবই গোগ্রাসে গিলতে পছন্দ করেন। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যমুক্ত পৃথিবীর, যেখানে নারী-পুরুষ এবং ধনী-গরীবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।