বাংলার দক্ষিণাঞ্চল বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে উপকূলীয় অঞ্চল। এখানে মানুষের কাছে জীবন মানে যুদ্ধ। ফি বছর এখানে চলে প্রকৃতির তাণ্ডব লীলা। এখানকারই একটা গ্রাম ‘উজান ডাঙ্গা। গাঁয়ের বাসিন্দাদের প্রায় সকলেই জেলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা কিংবা রাত অবধি সাগরে বা পার্শ্ববর্তী খালে মাছ ধরাটাই এদের কাজ। কেউ কেউ আছে মহাজনের বা অন্য কারাে ট্রলারে কিংবা নৌকায় কামলা খাটে। একদিকে বৈরি প্রকৃতি, অন্যদিকে সামাজিক জীবনের প্রান্তিক অবস্থান এদেরকে বরাবরই করে রেখেছে অসহায়। এমনই এক পটভূমিতে চিত্রায়িত হয়েছে মদন আর সুখীর জীবন-নাট্য। আলসেমী আর বিবেকহীনতার বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ে মদন। মদনের বউ সুখী সেই বেড়াজাল ছিন্ন করার অদম্য প্রয়াসে হাজার বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে চলে পরম নির্ভিকতায়। অন্যদিকে নীতিহীন প্রান্তিক সমাজের নির্লিপ্ততার সুযােগে অন্ধকার চোরা গলি বেয়ে সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে চলে অজিত নামের এক নষ্ট চরিত্রের পুরুষ। ব্যক্তি-স্বার্থ, লােভ আর ব্যভিচারের উপর্যুপরি সংঘাতে এগিয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। উঠে এসেছে সােহাগী নামের এক নারীর দেহােপজীবিনী হয়ে ওঠার কথা। গােলাপির মতাে এক অতি সাধারণ গৃহিণী অথচ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আপােষহীন নারীর কথা। বর্ণিল হয়ে উঠেছে ভাগ্যহত জেলে জীবনের চিত্র। বিক্ষোভিত উত্তাল সাগরে দোদুল্যমান জীবনের যুদ্ধ ও স্বপ্নের গল্প। বাংলা সাহিত্যে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের নিয়ে যে সাহিত্য কর্ম সৃষ্টি হয়েছে সে নিরীখে 'উজান স্রোতের ভেলা' উপন্যাসটি একটি অনন্য সাহিত্য কর্ম হিসেবেই বিবেচিত হবে, এটাই আমার বিশ্বাস।