শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস এখন আর পিলে চমকানাে কিছু নয়। ছেলেকে পাঠিয়েছেন মানুষ করতে। শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে ফিরবে নাকি কফিন বন্দি লাশ হয়ে ফিরবে কোনটাই নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ যেন ডালভাত ব্যাপার। সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠে সন্ত্রাসের মাত্রাও সব চাইতে বেশী। এ চার বছর বড়দি যে কতবার হঠাৎ হলত্যাগের নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে উৎকণ্ঠা নিয়ে ফিরে এসেছে তার হিসেব দিলে হাতের সব কটি আঙ্গুলে পােষাবে না। বড়দিকে ভার্সিটিতে ভর্তি করা থেকে বের হবার আগ পর্যন্ত বাবা, মা আমাদের এভাবেই উল্কণ্ঠা নিয়ে থাকতে হবে। তাই এ বাড়তি চিন্তাটা বাবা মায়ের সব সময় ছিল। দেশে কিছু একটা গন্ডগােল হলেই দেখতাম বাবার ব্যস্ততা। কাকে পাঠাবেন, কি করবেন এ যেন এক মহা সংকট। তথন মনে হয় একটা ভাই যদি থাকতাে আহা!। বাবা নিজে ক’বার নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এই হঠাৎ আদেশের ব্যাপারে কারাে কিছু করার নেই। বড়দি শহরের আরাে কটি মেয়ে মিলে চলে আসতাে তখন। সেদিনও হঠাৎ করে ভার্সিটিতে ভীষণ গােলযােগ। ক্যাম্পাসে গুলাগুলি, নিহত, আহত সব মিলে বিরাট কান্ড হয়ে গেল। ছাত্রদের নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব, বহিরাগতরা তাে সুযােগ পাবেই। সংবাদপত্রে ছাত্রছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশটি ছাপা হয়েছে। বাবার উত্তেজনা, মায়ের অবস্থা না বলাই ভাল, কিন্তু প্রতিবারের মত সমস্ত উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে এবার আর বড়দি ফিরে এল না। ঘটনার দিনই যেহেতু হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কাজেই বড়দির সেইদিনই চলে আসার কথা। কিন্তু না, সেদিনতাে নয়ই পরদিনও। সকাল পেরিয়ে গেল। বাবা আর ঠিক থাকতে পারলেন না। রওয়ানা দিলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। মাকে কি সান্তনা দেব, আমার নিজের চোখেই যখন তখন জল এসে যেতে লাগল...