কয়েকজন প্রতিভাবান মানুষ অদ্ভুত এক পাগলামি শুরু করেছিলেন। তাদের পাগলামিতে জন্ম হয়েছিল সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণতন্ত্র, চিকিৎসা, দর্শনসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সবকিছু। এটি ঘটেছিল এথেন্স নামের ছোট্ট একটি শহরে। তাদের সেই পাগলামি একটি মাত্র গল্পে নিয়ে এসেছেন সুজন দেবনাথ। গল্পের নাম ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’। এই গল্পের কোন চরিত্রই কাল্পনিক নয়। সক্রেটিস দুষ্টুমি আর রসিকতায় সুন্দর জীবনের কথা বলছেন। সেই রসিকতা থেকে প্লেটো শিখছেন জীবনের মানে। সক্রেটিস একজন তুমুল প্রেমিক। স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করছেন, চুপিচুপি যাচ্ছেন বুদ্ধিমতী আসপাশিয়ার কাছে, বয়স্ক নারীর কাছে শিখছেন প্রেম। প্লেটো খুঁজছেন - শরীরের আকর্ষণ ছাড়া সাধু-সন্ন্যাসী ধরণের প্লেটোনিক প্রেম। প্লেটো তার কবিতা, নাটক সব পুড়িয়ে দিচ্ছেন - কবি থেকে হয়ে যাচ্ছেন কঠিন দার্শনিক। তার আদর্শরাষ্ট্র থেকে কবি-সাহিত্যিকদের নির্বাসন দিচ্ছেন। ইতিহাসের জনক হেরোডটাস লিখছেন পৃথিবীর প্রথম ইতিহাস বই। শুরু হচ্ছে অলিম্পিক গেমস। সেখানে হেরোডটাস বলছেন ম্যারাথন যুদ্ধের কথা। সফোক্লিস লিখলেন সর্বকালের সেরা ট্রাজেডি 'রাজা ইদিপাস'। কিন্তু কে আসলে ব্যভিচারী ইদিপাস? নেতা পেরিক্লিস বিয়ে করেননি প্রেমিকা আসপাশিয়াকে। অথচ তাদের সন্তান আছে। এই ব্যভিচারের জন্য তিনিই ইদিপাস। তাকে নিয়েই রাজা ইদিপাস। ট্রাজেডি নাটকের জনক ইস্কিলাস অভিনয় করছেন ‘প্রমিথিউস বাউন্ড’। নাট্টকার ইউরিপিডিস গুহায় বসে লিখছেন ‘ট্রয়ের মেয়েরা’। পিথাগোরাস বের করছেন জ্যামিতির সূত্র, ‘গোল্ডেন রেশিও’। চিকিৎসাবিদ্যার পিতা হিপোক্রাটিস লিখছেন ডাক্তারদের 'হিপোক্রাটিক শপথ'। এথেন্সের মানুষ আবিষ্কার করছে গণতন্ত্র, পাহাড়ের উপর বসছে পৃথিবীর প্রথম সংসদ। সক্রেটিস যাচ্ছেন সেই গণতন্ত্র দেখতে। তার ভালো লাগছে না। তার ভাল না লাগা ছড়িয়ে পড়ছে প্লেটোর মধ্যে। সক্রেটিসকে নিয়ে কমেডি নাটকের জনক এরিস্টোফানিস লিখছেন প্রহসন নাটক ‘মেঘ’। কিছু মানুষের গোঁড়ামির জন্য হত্যা করা হচ্ছে সক্রেটিসকে। তিনি আসামী হয়ে দাঁড়াচ্ছেন আদালতে। শান্তভাবে চুমুক দিচ্ছেন হেমলক। সেই সময়টি জীবন্ত হয়ে উঠে এসেছে একটি গল্পে। গল্পের নাম ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’।