"আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই আমি মিছিলে যেতাম। তখন মিছিল মানেই বাঙালির প্রাণের দাবি-দাওয়া নিয়ে স্লোগান। যা শুনলেই আমার শরীরের সবগুলাে ইন্দ্রীয় সচেতন হয়ে উঠতাে। আমার আম্মা আমাকে ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা করতেন। আমি যেন মিছিলে না যেতে পারি। কিন্তু কোনাে বাধাই আমাকে আটকে রাখতে পারতাে না। পদ্মা মেঘনা যমুনা তােমার আমার ঠিকানা- এ শ্লোগান শুনলেই দৌড়ে মিছিলে চলে যেতাম। আমি আমাদের ছােট শহর ঈশ্বরদীর বাসস্ট্যান্ডের জনসভা শুনতে যেতাম। সেখানে গিয়ে শুনেছিলাম মেশিন গান, রাইফেল, স্টেনগান, ট্যাংক-এসব অস্ত্রের নাম। নেতারা সতর্ক করতেন তাদের ভাষণে, বলতেন এসবের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। আমি শুনে এসে বাসায় ছােট ভাই-বােনদের তা বলতাম। বাসার আশেপাশের মহিলারাও আমার কথা মন দিয়ে শুনতেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরােটা সময় নানা প্রতিকুলতা পেরিয়েছি। প্রত্যক্ষ করেছি সব কিছু। সেটা জীবন ইতিহাসের অংশ। ১৯৭৫ সালের পর থেকেই লক্ষ্য করলাম সেই ইতিহাস ভিন্ন চিত্রপটে আঁকা হচ্ছে। তারও অনেক পরে আমার সন্তানরা যখন স্কুলে পড়তে গেল, তখন তারা পাঠ্যপুস্তকে পড়ছে একেবারে ভিন্ন ইতিহাস। যে যুদ্ধ আমার নিজ চোখে দেখা, যে ইতিহাসের সাক্ষী আমি নিজে। সেই ইতিহাস আমার সন্তানরা কেন ভিন্ন রকম জানবে, পড়বে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমার কিশাের বয়সে দেখা সেই ইতিহাস আমি যা যতটুকু দেখেছি তা একদিন লিখব। জীবন জীবিকার তাড়নায় যথাসময়ে কাজটা শেষ করতে পারিনি। এবার তা লিখলাম।