বর্তমানে উপন্যাসের সংখ্যা ৪১টি। গল্পগ্রন্থ ১৬টি। প্রবন্ধ ১০টি। শিশুসাহিত্য ৩৫টি । ভ্রমণকাহিনি ১টি। প্রবন্ধগ্রন্থ ১৫টি। নাট্যকার হেনরিক ইবসেন বিষয়ে সম্পাদনা করেছেন ২টি বই এবং যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘জেন্ডার। বিশ্বকোষ’ ও ‘জেন্ডার ও উন্নয়ন কোষ'। তাঁর ১১টি গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে। ইংরেজি, ফরাসি, জাপানি, কোরিয়ান, রুশ, মালে, উর্দু, হিন্দি, কন্নড়, মালয়ালাম, মারাঠি, ফিনিস, আরবি, অসমিয়া, উড়িয়া ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার গল্প-উপন্যাস। ১৯৮৭ সালে 'হাঙর নদী গ্রেনেড', ১৯৮৩ সালে নীল ময়ূরের যৌবন, এবং ১৯৯৯ সালে টানাপােড়েন, ২০১২ সালে পূর্ণ ছবির মগ্নতা' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ পায়। পরবর্তী সময়ে হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ করেন বাংলাদেশ থেকে জ্যাকি কবীর। সেই পাণ্ডুলিপি পরিমার্জনা করেন প্যারিসের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাস্কাল জিঙ্ক। এই বই River of My Blood নামে দিল্লির রূপা পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে । ‘কাঠকয়লার ছবি’ উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে | Palimpsest প্রকাশনা সংস্থা, দিল্লি থেকে, ২০১৮ সালে । ‘টানাপােড়েন’ উপন্যাসটি উর্দুতে অনূদিত হয়ে পাকিস্তানের লাহাের থেকে প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। ভারতের মালয়ালাম ভাষায় অনূদিত হয়ে হাঙর নদী গ্রেনেড’ প্রকাশিত হয় কেরালা থেকে ২০০৩ সালে। মােহিনীর বিয়ে মালয়ালাম ভাষায় অনূদিত হয়ে ২০০১ সালে কেরালা থেকে প্রকাশিত হয় । ২০১৮ সালে পূর্ণ ছবির মগ্নতা' উপন্যাস অসমিয়া ভাষায় অনূদিত হয়ে গৌহাটি থেকে প্রকাশিত হয়। ‘নারীর রূপকথা” গল্প, উড়িয়া ভাষায় অনূদিত হয়ে ওড়িশা থেকে প্রকাশিত হয়। ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়, কোচবিহার, UGC পাঠক্রমে ‘আমিনা-মদিনার গল্প পাঠ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে । এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১৫টি কলেজ আছে। ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাস পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি', 'হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ। পত্রে পাঠ্য। ২০১৭ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা। বিভাগের ছাত্রী সেলিনা হােসেনের উপন্যাসের বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। জেন্ডার স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে ঘরগেরস্থের রাজনীতি’ গ্রন্থ পাঠ্য। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হয়েছে ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা', নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড'। ত্রিপুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাপিত জীবন পাঠ্য । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ইলিনয় রাজ্যের ওকটন কমিউনিটি কলেজে ২০০৬ সালের দুই সেমিস্টারে পাঠ্য ছিল হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে বাংলা বিভাগে ২টি গল্প পাঠ্য। অধ্যাপক মােস্তফা কামাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পি.এইচ.ডি. করেন সেলিনা হােসেনের উপন্যাস নিয়ে । বাংলা একাডেমিতে ৩৪ বছর কাজ করার পর ২০০৪ সালে পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি সদস্য ছিলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (২০০৯-২০১৬)। বাংলাদেশের প্রতিনিধি, ইউনেস্কো এক্সিকিউটিভ বাের্ড (২০১০-২০১৩)।
২১টি উপন্যাস, ৭টি গল্পগ্রন্থ ও ৪টি প্রবন্ধগ্রন্থের রচয়িতা সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। সমকালীন রাজনৈতিক সংকট ও দ্বন্দ্বের উৎস ও প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে সেলিনা হোসেন এর বই সমূহ-তে। সেলিনা হোসেন এর বই সমগ্র অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, রুশসহ একাধিক ভাষায়। প্রবীণ এ লেখিকা ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের ১৪ই জুন রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। আদি পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীতে হলেও সেখানে বেশি দিন থাকা হয়নি তার। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাজশাহী চলে এলে সেটিই হয়ে ওঠে সেলিনার শহর। স্থানীয় এক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য পড়তে ভালোবাসতেন তিনি। আর ভালোবাসার টানে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সেলিনা হোসেন। এরপর সরকারি কলেজে শিক্ষকতা এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনেও কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি পত্রপত্রিকার জন্য চালিয়ে গেছেন তার কলম। টানা ২০ বছর তিনি ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেলিনা হোসেন মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস রচনা করে পাঠকমনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তার রচিত মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক কালজয়ী উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্রও। ‘যাপিত জীবন’, ‘ক্ষরণ’, ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’, ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’, ‘যুদ্ধ’, ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ (তিন খণ্ড) ইত্যাদি তার জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘স্বদেশে পরবাসী’, ‘একাত্তরের ঢাকা’, ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন’ ইত্যাদি তার জনপ্রিয় প্রবন্ধ। কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘কাকতাড়ুয়া’, ‘চাঁদের বুড়ি পান্তা ইলিশ’, ‘আকাশ পরী’, ‘এক রূপোলি নদী’ সহ বেশ কিছু সুপাঠ্য গ্রন্থ। সাহিত্যাঙ্গনে এই অনবদ্য অবদানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়াও তিনি ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার’, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ সহ অসংখ্য পদক পুরস্কার পেয়েছেন।