‘শৈশব, কৈশাের থেকে যৌবন, তারপর মধ্য বয়স, বার্ধক্য অতিক্রম করে ক্রমেই শেষ পরিণতির দিকে যাত্রা। এই ছুটিয়ে নেয়ার বড়াে অবদান হচ্ছে প্রতিদিন। গুচ্ছ গুচ্ছ স্মৃতি তৈরি করে যাওয়া। আজ যা বর্তমানের ঘটনা, কালই সে পড়ে থাকছে বিগতের ঘরে। এক সময় সেসব হয়ে উঠছে স্মৃতি, জীবনের স্মৃতি। দুঃখের কিংবা সুখের, মূল্যবান অথবা মূল্যহীন। জীবন বােধহয় একটা স্মৃতির গ্রন্থ। আমার নিজের জীবনের স্মৃতি-গ্রন্থটি কিন্তু কখনােই খুব একটা মূল্যবান মনে হয়নি। অবশ্য অনেকে আমাকে আত্মজীবনী লেখার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বিখ্যাত লোকরা অথবা অবিখ্যাত অনেকেই আত্মজীবনী লিখে পৃথিবীখ্যাত হয়েছেন, জানি। আমি এই দুই দলের কোনােটিতেই নেই। কারণ জীবনটা আমার একেবারেই অখ্যাত।' কথাগুলাে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারির ঔপন্যাসিক রিজিয়া রহমানের। তাঁর আত্মজীবনীর তিন খণ্ড (নদী নিরবধি, প্রাচীন নগরীতে যাত্রা, দুঃসময়ের স্বপ্নসিঁড়ি) একত্রিত করে রক্তমাখা স্মৃতির সাগর প্রকাশ করা হলাে। গল্প, উপন্যাসে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে এবার নিজের জবানীতে নিজের কথা—শৈশব, কৈশাের, যৌবন ও মধ্য বয়স অতিক্রান্ত অপরাহ্নে পৌঁছে যাওয়া সময়গুলাের স্মৃতি।
রিজিয়া রহমান বাংলাদেশের প্রথম সারির ঔপন্যাসিকদের মধ্যে একজন। জনু ২৮ ডিসেম্বর। ১৯৩৯ সালে, কোলকাতার ভবানীপুরে। বাবার নাম মরহুম ডা. আবুল খায়ের মােহাম্মদ সিদ্দিক। মা-মরহুমা মরিয়ম বেগম। আদি পৈতৃক নিবাস পশ্চিমবঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর কয়েক বছর অধ্যাপনায়। নিয়ােজিত ছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন রিসার্চ অফিসার হিসেদ্ধে কাজ করেন। রিজিয়া রহমানের রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চলিশের অধিক। শতাধিক ছােটগল্প লিখেছেন তিনি। লেখালেখির অঙ্গনে প্রায় সবগুলাে শাখাতেই তার কলমের স্বচ্ছন্দ বিচরণ । প্রবন্ধ, সমালােচনা, কবিতা, রম্যরচনা ও শিশুতােষ লেখা ছাড়াও দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর সাহিত্য পত্রিকা ত্রিভুজ-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার লেখা অনূদিত হয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি দেশে এবং বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন, পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, যশাের সাহিত্য ? পরিষদ পুরস্কার, স্পষ্টবাদী পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ স্বর্ণপদক, কমর মুশতরী স্বর্ণপদক, কবি জসিমউদ্দীন পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার, সা'দত আলী আকন্দ সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার উল্লেখযােগ্য।