নজরুল, কাজী নজরুল ইসলামের সমকালে তাঁকে সাম্প্রদায়িক কবি হিসাবে ব্রাত্য করে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। প্রত্যুত্তরে নজরুল বলেছিলেন, ‘আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশেরই, এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের, সকল মানুষের। সুন্দরের ধ্যান, তার স্তবগানই আমার উপাসনা, আমার ধর্ম। যে কুলে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই আমি জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই আমি কবি।’ নজরুল সম্বন্ধে এককথায় বলা যায় গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং জনপ্রিয় কবি। তাঁর কাব্যপ্রতিভার স্ফূরণ ঘটেছিল কিশোর বয়স থেকেই। সেই বয়সেই যোগ দিয়েছিলেন ‘লেটো’ গানের দলে। উনিশ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে। বাইশ বছর বয়সে ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির প্রকাশ মাত্রই তিনি বাংলার এক শক্তিমান কবি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তারপর প্রায় পনেরো বছরের ইতিহাসে নজরুলের বিচিত্রমুখী প্রতিভার স্ফূরণ দেখা যায়। একদিকে সামাজিক অন্যায়, অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক গ্লানির বিরুদ্ধে তীব্রকণ্ঠে প্রতিবাদ, তেমনি অন্যদিকে কবি মনের উদ্বেলিত রোম্যান্টিকতা তাঁর বিদ্রোহীসত্ত্বাকে দিয়েছে নমনীয় সৌন্দর্য্য। অসংখ্য গানে, কবিতায় এক নিভৃত, কোমল, মৃদু ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। তাঁর সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার জন্যে তাঁকে দণ্ডিত হতে হয়েছিল। সত্যি বলতে, নজরুলের জীবন ও তাঁর কাজের বিষয়ে বর্তমান সময়ের মানুষের মধ্যে বিশেষ অজ্ঞতা দেখা যায়। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বহু গ্রন্থ ঘেঁটে, পরিশ্রম করে সেইসব গ্রন্থের নির্যাস থেকে তৈরি হয়েছে এই নাটক ‘নীলকণ্ঠ নজরুল’। খুব সচেতনভাবে তাঁর জীবনের মূল ঘটনাগুলোকে অবিকৃত রেখে নাটকের চাহিদামত সংক্ষেপিত করা হয়েছে।