"যোদ্ধাদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ হরেক রকম লােক তাঁরা। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল কারাে গভীরভাবে। কেউবা রাজনীতি বিমুখ। অধ্যয়ন পর্যায় অতিবাহিত করছেন অধিকাংশ লােক। কেউ প্রবেশ করেছেন কর্মজীবনে। তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ সামরিক কেউ বা আধা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত। পেশাজীবীও আছেন। কবি, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মিলেই তাে মুক্তিবাহিনী। যােগ দিয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক। এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়ে আইনজীবী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারি। কারখানার শ্রমিক, ক্ষেতের মজুর- সবাই একই কাফেলায়। সকল পরিচয় মুছে দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে। যুদ্ধ করেছেন স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনার জন্য। সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কয়েকজনকে বাছাই করা হয়েছে নানা দিক বিবেচনা করে। কেমন করে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ধাবিত হয়েছিলেন। প্রেরণার উৎস কোথায়! কেমন করে যােগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। দেখা গেছে, রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্তি ঘটছে একটি বড় অংশের। আবার সামরিক বাহিনির লােক- যারা রাজনীতি থেকে বহুদূরে অবস্থান করতেন, চাকরি এবং জীবনের মায়া ত্যাগ করে তাৎক্ষণিক যােগ দিয়েছেন যুদ্ধে। রাজনীতির বাইরে থাকা দেশের খেটে খাওয়া মানুষও তাই করেছেন। একমাত্র মাতৃভূমির মুক্তি-ই ছিল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে জীবন উৎসর্গ করার ব্রত নিয়েই যুদ্ধে যাওয়া। সেই বীর যােদ্ধাদের নিজেরাই বর্ণনা করেছেন বীরত্বগাথা। তাঁদের জীবনী থেকে উঠে এসেছে যুদ্ধে যাবার পেছনের কাহিনি। আর স্বপ্নের স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার সেই মহা গৌরবের মহাসময়ের বর্ণনা। শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গৌরবময় যুদ্ধগাথা। ফ্লাপে নয় শােনা যাক তাদের জীবনী থেকে।
তাজুল মােহাম্মদ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ১৯৭২ সালে। আর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে হাত দেন ১৯৭০ সালে। তখন থেকেই লেখালেখি করছেন এ বিষয় নিয়ে। ১৯৮৯ সালে। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় “সিলেটে গণহত্যা'। এ গ্রন্থের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি। সিলেটের যুদ্ধ কথা’-সহ আরও চার-পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সাল অবধি। সিলেটের গণহত্যা নিয়ে ব্যাপক আলােচনার কারণেই হয়তাে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ব্রিটেনের টুয়েন্টি টুয়েন্টি টেলিভিশনের। যােগাযােগ করে সে টিভি কর্তৃপক্ষ। নিয়ােগ করে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গবেষণার কাজে। ৯ মাসের গবেষণার ফল হিসেবে নির্মিত হয় ‘দা ওয়ার ক্রাইম ফাইল’ নামক প্রামাণ্য চিত্র। যা সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বের দেশে-দেশে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে, ব্রিটেনে, যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগেই তাজুল মােহাম্মদের ওপর হুমকি আসে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়েত শিবিরের পক্ষ থেকে। এক সময় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। দেশের বাইরে থেকেও আন্দোলন করেছেন তিনি। বসতি গড়েছেন কানাডায়। বছরে কয়েক মাস দেশে অবস্থান করে চালান গবেষণাকর্ম। বাকি সময় কানাডায় বসে লেখালেখি করেন। গ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে ষাটের অধিক। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার জন্য লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পেয়েছেন ইংল্যান্ডের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা। গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যুবকের ন্যায়। তাজুল মােহাম্মদের জন্মস্থান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। পরে থিতু হয়েছিলেন সিলেট শহরে।