চিকিৎসা বিজ্ঞান বেশ জটিল এবং খুব কঠিন একটা বিষয়। তবে এই চিকিৎসাবিজ্ঞানের জটিলতার ভেতরেও আছে নানান রকমের সব রসালো এবং মজাদার ও রোমাঞ্চকর কাহিনী। এমনই আটটি অদ্ভুত ঘটনা নিয়ে ৭২ পৃষ্ঠার বই "গল্পে গল্পে চিকিৎসাবিজ্ঞান"। বইটি লিখেছেন দন্ত চিকিৎসক ডাঃ সিকদার নাজমুল হক। পেশায় চিকিৎসক হলেও তিনি লেখালেখির অভ্যাসের দাস। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবের তায়েফে একটি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। সূচিপত্রের শুরুতেই যে অধ্যায়টি আছে তার নাম হচ্ছে "স্বপ্নদেবতা মরফিউস"। প্রশ্ন আসতেই পারে গ্রীক পুরাণের এই স্বপ্নের দেবতা চিকিৎসা বিজ্ঞানে কি করছেন। বস্তুত চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পৌরাণিক চরিত্রকে অমর করে রেখেছেন জার্মান ওষুধ বিজ্ঞানী ফ্রিডরিশ সার্টারনার। পপি ফুলের বীজাধার থেকে কিভাবে তৈরি হলো মরফিন, তার ব্যবহার আর কেনইবা এই ওষুধের নাম মরফিন রাখা হলো সেই ইতিহাস গল্পচ্ছলে আলোচনা করেছেন লেখক এই অধ্যায়ে। পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা জানবো একজন অদ্ভুত মানুষের গল্প যার নাম ছিল জোসেফ কেরি মেরিক। স্বাভাবিক ভাবেই জন্ম নেওয়া মেরিক হঠাৎ করে পরিচয় পেলো দ্যা এলিফ্যান্ট ম্যান নামে। কোন রোগের কারণে এভাবে মেরিকের জীবন বদলে গেলো তার বিশদ আলোচনা করা হয়েছে এই অধ্যায়ে। সর্দি কাশি এমন একটা অসুখ যে অসুখে ভোগেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া একেবারেই অসম্ভব। মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কত বছর ধরে এই অসুখের শিকার হয়েছে মানুষ। পিরামিডের যুগেও কি তার অস্তিত্ব ছিল? এই সর্দি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে "পিরামিডের মমিও কি সর্দিতে ভুগেছিল?" নামক অধ্যায়টিতে। বইয়ের পরবর্তী অধ্যায়ের নাম "পাকস্থলী চায়ের পেয়ালার মতো"। ভীষন অসুস্থ এক চাষীকে পরীক্ষা করে দেখা গেলো তার পাকস্থলী চায়ের পেয়ালার মত রূপ নিয়েছে। এমন অদ্ভুত সমস্যা কেনো হলো তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এখানে। সাথে আলোচনা করা হয়েছে পাকস্থলী ও পাকস্থলী সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুখ এবং তার প্রতিকারের কথা। এর পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে এমন এক পরজীবীর কথা যার নামকরণ করা হয়েছে গ্রিকদেবতা প্রোটিয়াস এর নামানুসারে। খুব অল্প কথায় চমৎকার করে লেখক ব্যাখ্যা করেছেন এই গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কথা। ম্যালেরিয়া জ্বর আর ম্যালেরিয়াবাহি মশার কথা আমরা সবাই জানলেও কিভাবে এই "প্লাসমোডিয়াম ভিভাক্স" নামক পরজীবিটি কাজ করে এটা আমাদের অনেকেরই অজানা। জীব বিজ্ঞানের বইতে অবশ্য এর একটা ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া গেলেও সেটা অতি নিরস প্রকৃতির। তবে এই বইতে তার একটা চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যাবে। সাথে জানা যাবে কুইনাইন এর গল্প আর নতুন একটা ওষুধের কথাও। আর এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে "মশার পেটে কিছুদিন"। এর পরের দুইটি অধ্যায়ের নাম যথাক্রমে "মেষপালকের চৌম্বক পাথর" আর "হিপোক্রেটিসের শপথ" যেখানে চুম্বকের চিকিৎসা গুণাবলী আর নবীন ডাক্তারদের নেওয়া শপথের কথা জানানো হয়েছে খুব অল্প কথায়। "গল্পে গল্পে চিকিৎসাবিজ্ঞান" বইটি নামের মতই বেশ মজাদার এবং একই সাথে তথ্যবহুল। লেখক গল্পের ছলে এখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ঘটে যাওয়া চমৎকার সব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। বইটির একটা বিশেষ দিক হচ্ছে প্রতিটা অধ্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে যে কোনো ব্যাপার চট করে বুঝে ফেলা যায়। আর বর্ণনা এমনভাবে দেওয়া যাতে যে কেউই এই ব্যাপারগুলো সহজে বুঝতে পারে। যারা একটু বিজ্ঞান মনস্ক পাঠক কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে আগ্রহী তাদের চমৎকার লাগবে এই বইটি।