প্রাণের মানুষ নেত্রকোণার উৎপল দত্ত ২০০২ সালে আকস্মিক আত্মহননের পথ বেয়ে অনন্তলােকে পাড়ি জমালে জীবন বিষয়ে নতুন জিজ্ঞাসার মুখােমুখি হই আমি। সদাহাস্যোজ্জ্বল, বিবিধ গুণের অধিকারী একটি মানুষ কোন অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে স্থাপিত হলে নিজেকে হনন পর্যন্ত করে ফেলতে পারে, তাই ঘুরপাক খেতে থাকে ভেতরে। তাঁর সেই অন্তর্ধান নিয়ে একটি গল্প সৃষ্টি হয়। আগুনের উৎসব’ শিরােনামে সেই গল্পটি স্থান পায় আমার আত্মহনন কিংবা স্বপ্নপােড়ানাে আখ্যান’ গল্পগ্রন্থে। এবং আজও এই রহস্যের কিনারা হয়নি আমার ভেতরে। কেউ পেরেছে এমনটাও জানা নাই। নানাবিধ ব্যাখ্যা আর সম্ভাবনার পাকে প্রকৃত রহস্য সম্ভবত অধরাই থেকে যায়। জীবনানন্দ দাশের ‘বিপন্ন বিস্ময়’-এর কাছেই এসে স্থিত হতে হয়। এখনাে পর্যন্ত। বিশ্বাস করি- একদিন আত্মহননের বিস্ময়কর ঘােরের সব জট উন্মােচিত হবে। হাজারাে প্রতিকূলতার ভিড়ে আমি জীবনের পক্ষে, বেঁচে থাকা অপার আনন্দের আজ অবধি এই বিশ্বাসে স্থিত। প্রণয়ােপাখ্যান’ সেই গল্পের বিবর্ধন, সেই সঙ্গে রাধাকৃষ্ণের প্রচলিত কাহিনি সংশ্লেষে রচিত। আমার বিশ্বাসে শিল্পসৃজনে শিল্পীর মৌল দুটি অনুভূতির নিঃশর্ত অবস্থিতি অনিবার্য। সেই বিশুদ্ধ দুই অনুভূতি সম্পর্কে এই আখ্যানে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এই আখ্যান রচিত হয়েছিল একটি নাট্যদলের আমন্ত্রণে। সেই দল রাধাকৃষ্ণ নিয়ে একটি নাটক মঞ্চায়ন করতে চেয়েছিল। নতুন ব্যাখ্যা ছাড়া শুধু ঐতিহ্যবাহী এই কাহিনির মঞ্চায়ন সমসময়ে ঠিক প্রাসঙ্গিক রূপে আমার কাছে ধরা দেয়নি। এ কারণে ভক্তি উজিয়ে সমকালীন কাহিনির মিশেলে তাকে আরও অধিক গ্রহণীয় করে তুলতে চেয়েছি। তবে আমার রচিত এই আখ্যান সেই নাট্যদলের আগ্রহ লাভে ব্যর্থ হয়। ফলে মঞ্চে এটি এখনাে দেখেনি আলাের মুখ। গ্রন্থাকারে প্রণয়ােপাখ্যান’ তুলে দিচ্ছি পাঠকের হাতে। পাঠের গণ্ডি পেরিয়ে এটি যদি কখনাে মঞ্চে আবিভূত হয়, তবে যুগপৎ পাঠকদর্শকই নির্ণয় করবেন এর সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান। ততদিন প্রতীক্ষায় রইলাম।