আদিবাসীরা যখন প্রশ্ন উত্থাপন করে ‘আমাদের সন্তান’ এবং ‘আপনারদের সন্তান’-দের জন্য কোন্ পৃথিবী রেখে যেতে চায় এখনকার ‘সভ্য’ মানুষেরা? তখন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রবল অস্তিত্ব আর শক্তির উত্তাপটুকু অনুভব করা যায়। বর্তমান সভ্যতার আধুনিক (নাকি যান্ত্রিক) অংশের হাতে চরমভাবে লাঞ্ছিত এবং অপমানিত ধরিত্রির সুপুত্র-আধিবাসীদের বিষয়ে দুনিয়াব্যাপী একটা নতুন দৃষ্টির দীপ্তি আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি। এটা কোনো দয়া নয়, বরং বলা যায় নতুন পৃথিবীর স্বপ্নকে রূপায়িত করার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করছে আজকের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। যন্ত্রের চাকার নিচে থেঁতলে যাওয়া মানবিক উপাদানগুলোর অবিকৃত রূপ খুঁজতে চাইলে আদিবাসীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। যে টেকসই (সাসটেইনেবল) উন্নয়নের কথা আজ বলা হচ্ছে তাও তো আদিবাসীদের থেকে ধার-দেনা করা। প্রযুক্তি থেকে বিযুক্ত থাকাই যেনো আদিবাসীদের বড় অপরাধ-যে প্রযুক্তি ক্ষেত্রবিশেষে হয়ে উঠেছে মানবজাতির ফ্যাঙ্কেনস্টেইন। এসকল ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতিসহ বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে বসবাস করছে। ভৌগোলিক এমং মনোজাগতিক প্রান্তিক অবস্থান বৃহৎ বাঙালি জনগোষ্ঠী থেকে এঁদের এনে দিয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও বর্ণময়তা। বনোফুলের গ্রাণ আর বর্ণচ্ছটায় উদ্ভাসিত এক প্রাণবন্ত জীবনের উত্তরাধিকার বহন করে বেড়াচ্ছে আদিবাসী জনজাতি। হাফিজ রশিদ খান তাঁর লেখালেখির মাধ্যমে বারবার আমাদের টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী, উপজাতীয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে। তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধে এসকল জনগোষ্ঠীর রূপ রঙ আর যন্ত্রণার অনুবর্তী করেছেন বাংলাভাষী পাঠকদের। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে মারমা ও চাকমাদের জীবন সংস্কৃতির গভীর মর্মমূলে ডুবসাঁতারে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর নিরন্তর অন্বেষায় এ জীবনের সৌরভ আর যন্ত্রণার স্পর্শ পাঠক বেশ ভালভাবেই পেতে সমর্থ হয়েছে। এ কারণে আদিবাসী জবীন ও সংস্কৃতিচর্চার ভূবনে হাফিজ রশিদ খান ভিন্নতর বৈশিষ্ট্যের কৃর্তাঅলা পথিক। তাঁর কাছে আমাদের ঋণও এখানেই। -খোকন কায়সার
Hafiz Rashid Khan- কবি ও প্রাবন্ধিক। জন্ম ১৯৬১ সালে চট্টগ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। ১৯৯০ সাল থেকে পার্বত্য জীবন ও সংস্কৃতির ওপর সমুজ্জ্বল সুবাতাস নামে লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে আসছেন চৌধুরী বাবুল বড়–য়ার সঙ্গে। পুষ্পকরথ তাঁর সম্পাদিত আরেকটি সাহিত্যের কাগজ। দুই সন্তানের জনক হাফিজ রশিদ খান চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এ কর্মরত আছেন। বাংলাদেশে বসবাসরত প্রাক জনগোষ্ঠীÑবিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সংস্কৃতি ও জীবনধারার ওপর তার কয়েকটি কাব্য ও গবেষণামূলক গ্রন্থ রয়েছে। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার তরুণ-প্রবীণ সাহিত্যকর্মীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত অনেক ছোট কাগজের বুকে অসংখ্য কবিতা মুদ্রিত হয়েছে তাঁর।