বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ফসল। আমরা এই অর্জনে যেমন গৌরববােধ করি, তেমনি তার চেতনায় উদ্দীপ্ত হই। আমাদের নতুন প্রজন্ম এই বিশ্বাসকে ধারণ করে। তবে, গত কয়েক বছরে এদেশেও জঙ্গীবাদের ভয়ানক উত্থান ঘটেছে। মৌলবাদী শক্তির হাতে বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়, মুক্তচিন্তক রাজিব হায়দার, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নীলাদ্রি নীল, অনন্ত বিজয়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন। দীপনসহ অনেক ব্লগার, পুরােহিত, ভিক্ষু বা বিদেশী নাগরিক যেমন জাপানি হেসে কুনিও বা ইতালিয় সিজার টাভেল্লার হত্যাসহ গুলশানের ‘হােলি আর্টিজান’ রেস্তোরায় নৃশংস হত্যাকান্ড এদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মহলকে আতঙ্কিত করেছে। বিচলিত করেছে। তরুণ লেকক অদিতি ফাল্গুনী তার ক্রমাগত হত্যার সেরেনাদে উপন্যাসে বিরল ধৈৰ্য্য ও একাগ্রতায় এদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নিহত প্রায় সব মুক্তচিন্তকদের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শােক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের সাথে কথা বলে, দীর্ঘ আলাপচারিতার মাধ্যমে তথ্যাদি সংগ্রহ করে সেসব তথ্য যথাযথভাবে ‘ফিকশনালাইজ করেছেন। নিহত মুক্তচিন্তকদের বিষয়ে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের পাশাপাশি তাদের একান্ত প্রিয়জনদের কাছ থেকে শােনা নানা ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি বা ডিটেলসের কাজ যুক্ত করেছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রক্তাক্ত বাস্তবতার সাথে লেখকোচিত কৌশলে যুক্ত করেছেন ভারতের চৈতন্য মহাপ্রভু বা মীরা বাঈয়ের মতাে উদারপন্থী সাধক-সাধিকাদের সাথে অধিকতর রক্ষণশীল ধর্মবাদী কর্তৃপক্ষের সঙ্ঘাত, ইসলামের ইতিহাসে খােলাফায়ে রাশেদিন বা চার খলিফার। আনাকাঙ্গিত মৃত্যুর বিবরণ বা মধ্যযুগের ইউরােপের চার্চে রাষ্ট্র বনাম চার্চের লড়াইয়ে হত্যার কাহিনী। কখনাে সূক্ষ কৌশলে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নানা পরিসর বা জাপানি কাবুকি নাটক, টি.এস. এলিয়টের কাব্যনাটক বা ফরাসি কবি জাঁক প্রেভেখের কবিতা ঢুকে গেছে এই বিচিত্র বিন্যাসের উপন্যাসে।