যা চলে গেছে তা কী আর কখনো ফিরে আসে? ছোটবেলায় এক মনোবিকারগ্রস্ত লোকের পাল্লায় পড়েছিল মোবাইল দোকানি বাপ্পা। ওর চোখের সামনে মট করে পরপর তিনটা বিড়ালের ঘাড় ভেঙ্গে ফেলেছিল লোকটা। তারপর দক্ষ শল্যবিদের মতো একটা একটা করে ঘাড়ভাঙ্গা বিড়ালের চোখগুলো উপড়ে নেয় ও। সেখান থেকে দুটো চোখ আলাদা করে। তারপর নিজের চোখের ওপর রেখে বলতে থাকে, ‘বিড়াল চক্ষু’, ‘বিড়াল চক্ষু’, ‘বিড়াল চক্ষু’। বাসায় ফিরে উথালপাতাল জ্বরে কাতর হয়ে যায় বাপ্পা। পরদিন বিড়ালের দুইটা ড্যাবডেবে চোখ এসে হাজির হয় বাপ্পাদের দোরগোড়ায়। ওইদিনই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে বাপ্পার বড়ভাই বিকাশ। অনেক ডাক্তার-কবিরাজ করা হয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। বিকাশের চোখের দৃষ্টি ফেরেনি। এক হুজুর জানান, বিকাশ এমন একটা কিছু নেয়ার চেষ্টা করেছিল যা ওর না। এজন্যই ওর এই অবস্থা। থানা শহর রণকেলীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদীটির নাম কাপুত। কাপুত মানে হলো ফিনিশড। শেষ। কাপুতের আরেকটা অর্থ আছে। ল্যাটিন ভাষা মোতাবেক কাপুত মানে হলো মাথা। কথিত আছে কাপুতে নাকি একসময় নরবলী হতো। নদীর তলদেশে এখনো কঙ্কাল, মানুষের মাথার খুলি মিলে। মিলে জং ধরা গিলোটিন। কাপুত নদীর ওপর সেতু বানানো হচ্ছে। এই ডামাডোলের মাঝে পরপর ছয়জন বাচ্চার খন্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলোর কপালের ঠিক নিচে, দুই চোখ যেখানে ছিল সেখানে দুইটা গোল চাকতির মতো গর্ত। চোখের বদলে নিকষ কালো আঁধার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে... ছয়টা লাশেরই পাঁজর ভাঙ্গা, হৃৎপিন্ড উপড়ানো! ফিসফাস বাড়ে, ফিসফাস গর্জনে পরিণত হয়। কাপুতের প্রাচীন দেবতারা নাকি ক্ষুদ্ধ। হাজারো নিষ্পাপ শিশুর রক্তেই কেবল মুক্তি মিলবে, নচেৎ নয়! ফিরোজ আহমেদ পুলিশ সুপার। তুখোড় গোয়েন্দা হিসেবে যেমন নাম কামিয়েছেন, শত শত জটিল কেস সমাধা করেছেন ঠিক তেমনি তার একটা আক্ষেপও আছে। আক্ষেপের নাম, হর্স কিলার। মহীনের ঘোড়াগুলি থেকে গান আওড়ে খুনীটি শিকারে নামতো। সেইজন্যই পত্রিকাওয়ালারা অদ্ভুত এই লেবেল সেঁটে দিয়েছে। কিন্তু সে তো বহুদিন ধরেই নিশ্চুপ। তবে কী বেশ পাল্টে পুনরায় ফিরে এসেছে খুনী? আবারো কী ভয়ংকর নৃশংসতায় মাতবে বিশ্বচরাচর? নাম তার বিঘতখানেক লম্বা। সৈয়দ শাহ ফতেহ গিল। দাদা আদর করে ডাকতেন গিলগামেশ, উরুক-রাজ গিলগামেশ, আক্কাদীয় ভাষার সেই পৌরাণিক চরিত্র। যার দুই তৃতীয়াংশ দেবতা আর এক তৃতীয়াংশ মানুষ। কিন্তু আমাদের গিলগামেশ কোন রাজা নয়, দেবতাও নয়। সে একজন মানুষ, সাধারণ মানুষ। পেশায় ডিবির সিনিয়র গোয়েন্দা। দাদা মারা যাওয়ার আগে তার জন্য একটা ডায়েরি রেখে গিয়েছিলেন। ডায়েরিতে অনেক কথার ফাঁকে গিলগামেশের জন্য তিনি একটা সতর্কবার্তা লিখে গেছেন- মনে রেখো গিলগামেশ, শিকারও একসময় শিকারীতে পরিণত হয়, আর শিকারী শিকারে। রণকেলীতে কে শিকারীতে পরিণত হবে? আর কেইবা হবে শিকার? ডিবির গোয়েন্দা সৈয়দ শাহ ফতেহ গিল কী পারবে শিকারীকে থামাতে? নাকি নির্ভুল লক্ষ্যভেদে শিকারী তীরবিদ্ধ করবে তার শিকারকে? গিলগামেশ মহাকাব্য বিশ্বের প্রাচীনতম উপাখ্যান। যে অমরত্বের সন্ধানে মানুষের নিরন্তর ছুটে চলা, তা কী কখনো পায় সে? নাকি মরণশীলতাই তার একমাত্র নিয়তি?
জাহিদ হোসেনের জন্ম সিলেটে, বেড়ে উঠা ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশায় ব্যাংকার হলেও বইপড়ার প্রতি অসম্ভব ঝেঁাক থেকেই লেখালেখিতে আগ্রহ। শুরু অনুবাদ দিয়ে। পরপর দু’টি অনুবাদ প্রকাশিত হয় তার। অ্যাম্বার রুম ও ম্যাক্সিমাম রাইডঃ দ্য অ্যাঞ্জেল এক্সপেরিমেন্ট। তারপর তিনি প্রবেশ করেন মৌলিক লেখালেখির জগতে। মৌলিক থ্রিলার হিসেবে তার প্রথম প্রয়াস ঈশ্বরের মুখোশ যা ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর একে একে বের হয় ফিনিক্স, কাদ্যুসেয়াস, একজোড়া চোখ খেঁাজে আরেকজোড়া চোখকে, দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব, গিলগামেশ, ক্সনঋর্ত ও ইথাকা। শুধু উপন্যাস নয়, সম্প্রতি পরশুরামের কঠোর কুঠার নামে একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। তার প্রকাশিত বই ওপার বাংলাতেও ব্যাপক সমাদৃত ও প্রশংসিত। কলকাতার অভিযান পাবলিশার্স ও বুকিকার্ট থেকে ইতিমধ্যে তার কয়েকটি বইয়ের ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।