"খাজনা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: পরের দিন সকাল বেলা রকিবের লাশ পৌঁছে দেওয়া হলাে সুলতানার কাছে। রুস্তমকে লাশ নিয়ে আসতে দেখেও সুলতানা কল্পনা করে নি-এটা তার ভালােবাসার মানুষটার লাশ। কিন্তু সাদা কাপড়ে মােড়ানাে মুখটা যখন খােলা হলাে তখন নিজের চোখকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না সুলতানা। মনে হচ্ছে-খুব ভােরে কোনাে দুঃস্বপ্ন দেখছে সে। সুলতানা। ধীর পায়ে এসে রকিবের লাশের পাশে বসলাে। কি নিশ্ৰুপ হয়ে ঘুমাচ্ছে ছেলেটা! সুলতানার মনে হলাে-রকিব সত্যিই ঘুমাচ্ছে, ওর কিছু হয় নি। কিন্তু বুকের উপর ডান হাতটা রাখতেই চমকে উঠলাে সে, সাদা কাপড়ের উপর থেকেই উপলব্ধি করতে পারলাে একটা দগদগে ক্ষত। এতক্ষণে সুলতানার বাবা-মাও ছুটে এসেছে উঠোনে। নিজের মেয়ের ভবিতব্য দেখে ঠিক নেই তারা। রকিব যে যুদ্ধে গিয়েছিলাে তারা জানতেন না। সুলতানা কি জানতাে? রকিব তাে সুলতানাকে না বলে কোনাে কাজ করে না। তাহলে সুলতানা কি সবাইকে এতদিন মিথ্যা বলেছিলাে, "রকিব চাকরির খোঁজ করছে।' সুলতানা রকিবের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। রকিবের বুকে রাখা ডান হাতটা কাঁপছে তার। সেই কাঁপাকাঁপা হাতটা দিয়েই আলতাে করে রকিবের কপাল ছুঁয়ে দিলাে সুলতানা। মুখের কাছে মুখটা এগিয়ে নিয়ে বললাে, "এই তােমার কথা রাখা?" রকিব তাে উত্তর দিতে পারবে না। তার তাে এখন। মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতাে ক্ষমতা নেই। সে এখন মানুষের সাথে কথা বলে না। কথা বলে ফেরেশতাদের সাথে। সুলতানা বললাে, "বলেছিলে তাে ফিরবে। অপেক্ষায় ছিলাম আমি। আমি তাে তােমার কথা রেখেছিলাম, কাউকে বলি নি যে তুমি যুদ্ধে গেছে। আর তুমি কিনা আমাকে দেওয়া কথাটা রাখলে না?" সুলতানার চোখ দুটো লাল হয়ে এলাে। সে তার নাকফুলে হাত রেখে রকিবের দিকে তাকিয়ে বললাে, "তাহলে নাকফুল কেনাে পরিয়েছিলে? তুমি তাে বলেছিলে তােমাকে ছাড়া কিছুটা সময় দেশের জন্য খাজনা দিতে হবে, আমি তাে রাজিই ছিলাম। কিন্তু এখন তাে সময়ের বদলে তােমাকেই খাজনা দিতে হলাে আমার।"