এমা অলসেন তার একুশ বছরের জীবনে এসে প্রথম জানতে পারে যে, সে অলসেন পরিবারের সন্তান নয়, এমনকি সে ডেনিশ নয়, বাংলাদেশী! ১৯৭২ সালে তার বাবা বাংলাদেশ থেকে তাকে দত্তক হিসাবে ডেনমার্কে নিয়ে এসেছিলেন।
সে একজন “যুদ্ধশিশু”! এমার মাথায় যেন পৃথিবী ভেঙ্গে পড়ল!
সেই সময়কার ঘটনা তার বাবার কাছে কিছুটা শুনে আর ইন্টারনেটে পড়ে এমা হতভম্ব হয়ে গেল। তার মায়ের মতো আরো এমন লক্ষাধিক বীরঙ্গনা মায়েদের জীবনে সেই সময়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে কী নির্মম, কষ্টকর আর বর্বরোচিত পরিণতি নেমে এসেছিল! তার চেয়েও দুঃখজনক বিষয় হলো নিজ দেশের মানুষের কাছে তাদের কেমন সীমাহীন অবজ্ঞা, অপমান সইতে হয়েছিল!
এমা তার মায়ের কষ্টের ভাগীদার হতে প্রায় অসম্ভব কিন্তু প্রত্যয়ী এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। সে যাবে বাংলাদেশে, তার বীরাঙ্গনা মা’কে খুঁজে বের করতে।
এমা তার প্রকৃত মায়ের সন্ধানে বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে একদিন বাংলাদেশে এলো। নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শান্ত শ্যামল পরিবেশে তার হতদরিদ্র মা’কে সে খুঁজে পেল, যার নাম নুরজাহান - সারা জাহানের আলো! সে জানতে পারে যে, তার মা তার নাম রেখেছিলেন আমিনা।
দু’চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে আমিনা ভাবছে, কী আয়রণিক! ‘যেখানে চিন্তার কিছু নেই’ সেই নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ‘সারা দুনিয়ার আলো’ নামের কিশোরী মেয়েটি কী ভয়াবহ নির্যাতন আর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল!
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি সত্যি ঘটনার ওপরে ভিত্তি করে লেখা হলেও এটি একটি ফিকশান। ওপরের ঘটনাটি এবং কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা বাদে এই উপন্যাসের সকল চরিত্র, নাম, স্থান, ঘটনা সবই লেখকের কল্পনাপ্রসূত।
"মনের আনন্দের জন্যই লেখালেখি করি। ২০০১ সাল থেকে লেখালেখি করলেও ২০০৯ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকে লেখালেখিতে বেশ নিয়মিত হয়েছি। সেনাবাহিনীতে চাকুরির সুবাদে যেমন দেশের প্রায় সব জায়গায়ই ঘুরেছি, বিদেশেরও ত্রিশটি দেশে ঘুরেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও জাতিসংঘের অভিজ্ঞতা ছাড়াও দেশে বিদেশে নানা রকম মানুষের সংস্পর্শে এসেছি, নানা ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি, সেসব অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথাই আমার গল্প উপন্যাসে আপনাতেই চলে আসে! ছোটগল্প, উপন্যাস ছাড়াও অনুবাদ করতে পছন্দ করি। এযাবৎ আমার ১৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ৩টি উপন্যাস, ২টি ছোটগল্প সংকলন, ১টি মুক্তিযুদ্ধের উপর গল্প সংকলন, ১টি জাতিসংঘের অভিজ্ঞতার উপরে লেখা নন-ফিকশন, ২টি শিশুতোষ মজার ভূতের উপন্যাস, ৪টি অনুবাদ ও ২টি যৌথ গল্প সংকলন রয়েছে। এবারের (২০১৯) বইমেলায় আমার ৩টি বই (১টি ভ্রমণকাহিনী, ১টি জীবনধর্মী গল্প সংকলন ও ১টি শিশুতোষ গল্পের অনুবাদ) প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। লেখালেখির পাশাপাশি ""নহলী"" নামে আমি একটি সংগঠন গড়ে তুলেছি, যেটার প্রকাশনীর মাধ্যমে নবীন লেখকদের বই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছাপিয়ে থাকি এবং একটি মোটামুটি বড় লাইব্রেরি গড়ে তুলেছি যেখান থেকে যে কেউ বই নিয়ে পড়তে পারেন। লাইব্রেরিটিতে এখন প্রায় চার হাজার বই থাকলেও শীঘ্রই এতে দশ হাজার বই যোগ হবে এবং অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশের যে কেউ আমাদের কুরিয়ার খরচে বই নিয়ে পড়তে পারবেন। "