>> ইংলিশ বইয়ের লিংক - https://www.rokomari.com/book/185376
"স্ট্রাকচারড সি/সি-প্লাস-প্লাস প্রোগ্রামিং” বইটির ভূমিকা: আজকের জগতে programmingএর উপস্থিতি সর্বত্র। আমরা যে বিষয়েই পড়াশোনা করি, যে বিষয় নিয়েই কাজ করি, কি কর্মক্ষেত্রে কি শিক্ষাক্ষেত্রে, এটা খুবই সম্ভব যে সেখানে আগে পিছে কোনো এক সময় কম বা বেশি programmingএর দরকার হবে। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের programming শেখার দুটো প্রধান অন্তরায় রয়েছে। প্রথমটা হলো program লেখতে গেলে আমাদেরকে যন্ত্রের কাজ করার ধরন অনুযায়ী অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়, যেখানে মানুষ হিসাবে আমাদের চিন্তা করার ধরনটা আলাদা। এই সমস্যাটা আসলে বিশ্বব্যাপী যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদেরই। তবে বিস্তারিত আলোচনা ও ভালো শিক্ষাদান পদ্ধতির কার্যকর ব্যবহার দিয়ে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। আর সেটা হলেই একজন শিক্ষার্থী programmingএ মজা পেতে শুরু করে। তার আগে পর্যন্ত programming আসলে বিস্বাদ লাগে। আর দ্বিতীয় অন্তরায়টা যেটা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য সেটা হলো programmingএর ওপর মাতৃভাষায় ভালো বই না পাওয়া Programming বিষয়ে প্রকাশিত ভালো বই পুস্তক প্রায় সবই বিদেশি ভাষায় বিদেশি লেখকদের লেখা। এর ফলে সেগুলো পড়ে একজন শিক্ষার্থী ব্যাপারগুলো অল্পসময়ে মোটামুটি বুঝতে পারলেও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণগুলো একদম তাদের হদয়ের গভীরে সেভাবে পৌঁছে না। বলা হয়ে থাকে একজন শিক্ষার্থী ভালো শেখে যখন সে তার মাতৃভাষায় তার চারপাশের জগতের সাথে নতুন জ্ঞানের সংযোগ ঘটাতে সক্ষম হয়। বিদেশি ভাষায় রচিত বিদেশি পরিবেশের সাথে মিলিয়ে লেখা বই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সে সংযোগ তেমন করে ঘটিয়ে দিতে সক্ষম হয় না। আমাদের তাই দরকার বাংলা ভাষায় রচিত বই পুস্তক, বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থীদের যারা বিদেশি ভাষায় ওই বয়সে অত অভিজ্ঞ হয়ে উঠেনি। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যখন programming শিখতে যায় তখন তারা একসাথে এই উভয় সমস্যার মুখোমুখী হয়ে হিমশিম খায়। বাংলা ভাষায় লেখা programmingএর আমাদের এই বই এই উভয় সমস্যাকে যতটা সম্ভব মোকাবেলা করবে। এই বইটি লেখা হয়েছে নতুন যারা programming শিখতে চায় তাদের জন্য। তবে এই বই পড়ে একজন নবিশ শিক্ষার্থীও ধাপে ধাপে দক্ষ programmer হওয়ার জন্য দরকারি জ্ঞান লাভ করতে পারবে। এই বইটিতে programming language হিসাবে C/C প্লাস প্লাস ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তবে ব্যাপ্তি কেবল structured programming। এই বইটি মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য, নানা স্তরে programming প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য, এমনকি যারা পেশাদার programmer হতে চায় তাদের জন্যও। এই বইতে আছে অজস্র উদাহরণ, হাজারো বিশ্লেষণ, পরামর্শ, ও কৌশল, প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক জ্ঞান, ধারণাগত প্রশ্ন, এবং অনুশীলনী সমস্যা। অবশ্য বইটির শুরু থেকে ধরে নেওয়া হয়েছে যে একজন শিক্ষার্থীর ন্যূনতম মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের গণিত ও বিজ্ঞানের জ্ঞান আছে। বইটি যাতে পাঠ্য বই হিসাবে ব্যবহার করা যায় আবার শিক্ষার্থীদের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবেও পৌঁছানো যায়, সে কথা মাথায় রেখে এতে বেছে নেওয়া হয়েছে আধা-আনুষ্ঠানিক ভাষা। এই বইতে প্রসঙ্গগুলো এমন করে আলোচনা করা হয়েছে যেটা মৌখিক আলোচনার প্রায় সমপর্যায়ের। কাজেই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে একজন প্রভাষক পড়াশোনার সময় যা বলবেন ঠিক যেন সেটাই এই বইতে লেখা হয়েছে। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষক পায় না, বিশেষ করে গ্রামের দিকে ও মফস্বল শহরে। তাদের পক্ষে ধীরগতির internet ব্যবহার করে video দেখাও সম্ভব হয়ে উঠে না। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা হাতের কাছে কাউকে পেলেও কেবল যাতে বই পড়েই বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেতে সমর্থ হয়, সেই প্রয়াস থেকেই এই বই লেখা। এ ছাড়া এই বই লেখতে গিয়ে নানা রকম আনুষ্ঠানিক শিক্ষণ ও শিখন তাত্ত্বিক বিষয়াদি ভাবনায় রাখা হয়েছে, যাতে একজন শিক্ষার্থী সহজে সমন্বিত জ্ঞান লাভ করতে পারে।
br> আমরা যে ভাষায় অভ্যস্ত সেই ভাষা আমাদের চিন্তন ক্ষমতা ও বোঝার সক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া একটা শব্দ সবচেয়ে ভালো অর্থদ্যোতনা সৃষ্টি করে যদি সেটা আশেপাশের শব্দের সাথে ঐক্যতানে থাকে। একটা বিদেশি শব্দ স্বাভাবিকভাবে দেশি ভাষার অন্যান্য শব্দের সাথে মিশ খায় না। একজন ব্যক্তি হয়তো শেষ পর্যন্ত বিদেশি ভাষা ভালোই আয়ত্তে আনতে পারে এবং একসময় হয়তো ভাবতে শুরু করে যে বিদেশি ভাষাটা যেন তার নিজের ভাষা। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় কেবল দীর্ঘ সময় চর্চার ফলে। অথচ দেশি ভাষার শব্দ একদম শুরু থেকেই প্রাকৃতিকভাবেই আপনা-আপনি শিক্ষার্থীর মনের ভেতরে অর্থ তৈরি করে।
এখন প্রশ্ন হলো নতুন শিক্ষার্থী যারা প্রযুক্তি শিখতে আগ্রহী, আমরা তাদের কাছে কোন ভাষা তুলে দেবো। তারা কোন পর্যায়ের দক্ষতা অর্জন করুক বলে আমরা চাইবো। যদি তাদের ভেতরে সত্যিকারের গুণগত মান সম্পন্ন অর্থবোধকতা তৈরি করতে হয় যেটা মস্তিষ্ক ও হৃদয় দুই-ই ছাপিয়ে যায় তাহলে আমাদের অবশ্যই দেশি ভাষার পরিভাষা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রযুক্তির জগতে ব্যবহার করার জন্য বাংলায় দরকারি পরিভাষা নেই। দু-একটা শব্দ যেগুলো আছে সেগুলো intuitive না হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে। এমতাবস্থায় গণনা জগতের জন্য সহজবোধ্য পরিভাষা তৈরির দুরন্তকাজ হাতে নিয়ে আমরা এই বইয়ে। প্রস্তাবিত অনেক শব্দ ব্যবহার করেছি। তবে শব্দগুলোকে ইংরেজি অক্ষরে লিখিত ইংরেজি শব্দের পাশাপাশি লেখা হয়েছে, এবং মোটামুটিভাবে প্রথমবার ব্যবহার করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পাঠের মসৃনতা নষ্ট হয়। এই বইয়ে আমরা ইংরেজি শব্দকে বাংলা অক্ষরে লেখি নাই, কারণ যে শব্দ যে ভাষার সেটা সেভাবে জানাই আমাদের বিবেচনায় শ্রেয়তর।
পাঠ্যবিষয়ের কথা বিবেচনা করলে এটি এই বইয়ের তৃতীয় সংস্করণ। প্রথম দুটি সংস্করণের থেকে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে এই সংস্করণে। কিছু নতুন অধ্যায় যোগ করা হয়েছে, আগের কিছু অধ্যায় ভেঙে একাধিক করা হয়েছে, আবার কিছু অধ্যায়কে একসাথে করে একটা অধ্যায় করা হয়েছে, কিছু পাঠ যোগ করা হয়েছে, কিছু পাঠ তাদের অবস্থান বদল করেছে, অনেক নতুন অনুশীলনী যোগ করা হয়েছে, সর্বোপরি পড়ার ক্ষেত্রে বন্ধনীর ভেতরে বাংলা থাকায় যে পাঠের মসৃনতায় সমস্যা ছিলো সেটা দূর করা হয়েছে। এই পর্যায়ে বইটি যদি programming শিক্ষার্থীদের বিন্দুমাত্রও কাজে লাগে তাহলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমরা মনে করবো।