"একজন আমলা মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরি" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সিকি শতাব্দী পার হতে না হতেই বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলার বাঙালি সমাজ বুঝতে পেরেছিল যে, এ স্বাধীনতা বাঙালি জাতির জন্য নয়, এ স্বাধীনতা হল বাঙালি জাতিকে শােষণ ও বঞ্চনার মাধ্যমে তিল-তিল করে ধ্বংস করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়ােজন ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের মত একজন নির্ভীক, নির্লোভ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদে প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাসী এক রাষ্ট্রনায়ক। বাঙালি জাতির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা লাভের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের পর অবশেষে ১৯৭১ সনের ৭ মার্চ সােহরাওয়ার্দি উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বজ্রকণ্ঠে জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন, “যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মােকাবিলা করতে হবে। তাঁর এ আহ্বানে উদ্দীপ্ত হয়ে এ দেশের জনগণ দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এ সংগ্রামে সেনা সদস্য, অস্ত্রধারী মুক্তিবাহিনীর যেমন অবদান রয়েছে, ঠিক তেমনি অন্যান্য পেশাজীবী যেমন-সরকারী কর্মচারী, কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, খেলােয়াড়, কূটনীতিক প্রমুখ ব্যক্তিগণের অবদানও কোন অংশে কম ছিল না। তাঁরাও মুক্তিযােদ্ধার সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধা। তাঁদের কেউ মুজিবনগর কর্মচারী তথা আমলা মুক্তিযােদ্ধা, কেউ শব্দসৈনিক, কেউ বীরাঙ্গনা (একাত্তরে নির্যাতিত) প্রমুখ। এ বইটিতে একজন আমলা মুক্তিযােদ্ধা কীভাবে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে নিজের ও পরিবারের জীবন বাজি রেখে দেশের ভিতরে ও প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের অধীনে নিরলসভাবে কাজ করেছেন, তারই একটি মর্মস্পর্শী কাহিনী তাঁর ডায়েরিতে নিখুঁতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।