প্রেম, প্রাপ্তির সংশয়, ছাত্ররাজনীতি, স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রায়নের জন্য আন্দোলন, নির্যাতন এবং একজন স্কুল শিক্ষক প্রতিবাদী মুক্তিযােদ্ধার করুণ পরিণতি; আর এসবই বাদল এবং লতার মসৃণ জীবনকে করে তােলে কন্টকময়। অনেকদিন পর বাদল যেদিন ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি এসেছিলাে সেদিন সে সারাপথ বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিল এবং পথিমধ্যে এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাে। বৃষ্টিস্নাত পথ তার উপভােগ্যই ছিল তথাপি ঐ বাড়িতে বাদল ভিষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আশ্রয়দাতা স্কুলশিক্ষক আজমল এবং তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে মাতৃহারা লতা তাকে কয়েকদিন যাবৎ অনবরত সেবাযত্ন করে সুস্থ করে তােলে। এরপর থেকে বাদল পৃথিবীতে এই দুজন মানুষের উপর খুব কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে। বাদল সুস্থ হয়ে নিজেদের বাড়ি যায় এবং মাত্র কয়েকদিনেই গ্রামের একটি কলেজের উপর তৎকালীন সামরিক সরকারের চর একজন ব্যক্তির অশুভ রাজনীতি এবং ব্যক্তি আধিপত্য দেখে মর্মাহত হন। কলেজের ছাত্রদের নিয়ে বাদল ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে অগ্নি ছড়ান। লতা সে কলেজেরই ছাত্রী। লতাসহ সবাই একবাক্যে বাদলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রনেতা এবং সামরিক সরকার বিরাধী আন্দোলনকারী ধরে নেয়। এ মিথ্যাটা বাদলকে প্রতিমূহুর্তে ধাওয়া করে এবং সে চেষ্টা করেও কাউকে বােঝাতে পারেনি যে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত না। তবে কিছুটা দেরিতে হলেও বাদল লতাকে সব বুঝতে পেরেছিলাে এবং সর্বগুণের অধিকারিণী লতার উদার ভালােবাসা পেয়েছিলাে। এর মধ্যে অনেক ওলট পালট ঘটনা সময়ের বৈপরীত্যে ওদের জীবনে ঘটেছিলাে যার মধ্যেও উভয়ের ভালােবাসা ছিল নিবিড়। বস্তুতই দুজন দুজনকে কতখানি বিস্তীর্ণভাবে বুঝেছিল যখন ভালােবাসার ধারাবাহিকতার আশীর্বাদ ছিল এক বৃষ্টির শহর ।