বারাব্বাস উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল ১৯৫০ সালে। এ-উপন্যাসে দেখানাে হয়েছে একজন অপ্রেমী মানুষ কেমন করে বিশ্বাসে সুস্থিত হল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত মানবিকতার পটভূমিতে বারাব্বাসের এ অম্বেষণ তাকে তীব্র আত্মিক অনুভূতিতে স্বাতন্ত্র দিয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সমালােচকের মন্তব্য উদ্ধৃত হল‘তাঁর এই গ্রন্থখানি এক দুর্ভেয় রসে আপ্লুত। আত্মার নিগ্রহে, বিশ্বাসের আলােড়নে এবং মানব-মনের অঘ্রগতির সঙ্গে নিশ্চিত সমধর্মিতায় মানবজীবন এবং তার নিয়তির এক আশ্চার্য রহস্য এখানে উন্মােচিত হয়েছে। মানুষের মৌলিক জীবন-নাট্যের অন্তর্নিহিত বিরােধ এবং মুমূর্ষ মানব-মনের আর্তনাদ এখানে সমান পরিস্ফুট। মৃত্যুর মুহুর্তে সে তার আত্মাকে এক নীরন্ধ তমিস্রার হাতে তুলে দিয়ে গেছে। শিল্পকর্মের দিক থেকে বারাব্বাস-এ এক চুড়ান্ত উৎকর্ষের সন্ধান পাওয়া যাবে। এ-বই সংকেতে সমৃদ্ধ, নিষ্ঠায় বলিষ্ঠ, আঙ্গিকে নিরাভরণ। পার লাগেরভিস্টের নিজস্ব চিন্তাধারা এখানে তার শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এ শুধু নিছক একখানি সাহিত্যগ্রন্থই নয়; সমকালীন ভাবনাবুদ্ধি এখানে এক দৃষ্টিগ্রাহ্য বস্তুশরীর লাভ করেছে বললেও কিছুমাত্র অত্যুক্তি করা হয়না। ক্রুশের গায়ে কীভাবে তাঁদের বিদ্ধ করা হয়েছিল এবং কারাই-বা তাঁর চারপাশে এসে সমবেত হয়েছিলেন তখন, সবাই তা জানেন। দাড়িয়ে ছিলেন মাতা মেরি, মেরি ম্যাগডালেন, ভেরােনিকা, সিরিনের সাইমন আর এরিমেথিয়ার যােশেফ। সাইমন তাঁর ক্রুশটিকে বহন করে নিয়ে এসেছিলেন। যােশেফ তাঁর শবদেহকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করে দেন। ঢালু প্রাপ্তরের একপাশে আর একটু নীচে, আর-একজন লােকও দাঁড়িয়ে ছিল, মাঝখানে ক্রুশটিতে। বিদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী লােকটির উপরে তার দুই চক্ষু নিবন্ধ। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সে তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণা দেখে গিয়েছে। লােকটির নাম বারাব্বাস। তাকে নিয়ে এই বই। জুলফিকার নিউটনের নােবেল বিজয়ী পার লাগেরভিস্টের ‘বারাব্বাস’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের চিরকালীন সম্পদরূপে বিবেচিত হবে।