"জাপানের রূপকথা ও লোককথা" বইয়ের পেছনের কভারে লেখা: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লােককথা-রূপকথার মতাে জাপানেরও রয়েছে সমৃদ্ধ নানা গল্পকথা। কথকতা যা এক অসামান্য শিল্পমান সমৃদ্ধ সাহিত্য। শুধু যে শিশুদের তা অনুপ্রাণিত করে তা নয়। এ সমস্ত রূপকথা-লােককথা-কাহিনী সব বয়সের মানুষদের অনায়াসে আকৃষ্ট করে। জাপানের সভ্যতা অত্যন্ত প্রাচীন। সে সময়কাল থেকেই লােকমুখে, তৎপরবর্তীকালে লেখ্যরূপে বিভিন্ন কাহিনী সমাজের প্রায় সকলের কাছেই পৌছে চলেছে। কিছুটা হয়তাে লুপ্ত হয়েছে। সে সমস্ত লােককাহিনীর অনেকটাই এখনও সমান জনপ্রিয়। জাপানের লােককাহিনীকে বলে মিনওয়া যা ইংরেজিতে (Folktale) আর কিংবদন্তি (Legend) যাকে জাপানি ভাষায় বলে দেনদেৎসু। মিনওয়ার সঙ্গে দেনদেসুর পার্থক্য হলাে দেনদেসু প্রকৃত ঘটনাভিত্তিক আর মিনওয়ার কোনাে ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। লােকমুখের ধারার বাইরেও নানাসময়ে জাপানে লােককাহিনীর লেখ্যরূপ ধারণকৃত। আমাদের জানা মতে, জাপানের রাজতন্ত্রের প্রথম ঐতিহাসিক দলিল কোজিকি ও নিহােনশ্যোকিতেও এর প্রমাণ মেলে। জাপানের অত্যন্ত পরিচিত ননা, কিওগেন, কাবুকি নাটক বিভিন্ন সময়ে লিখিত হলেও তা অনেক সময় লােককাহিনী ভিত্তিক হিসেবেই প্রতিভাত। | ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে জাপানের বিদ্যালয় শিক্ষা আবশ্যিক হয়। তখন থেকেই লােককাহিনী-রূপকথা পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়। এর জন্যই মূলত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা লােককাহিনী-লােককথা-রূপকথাকথকতা সকল কিছুর সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এই মহতী কাজে অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার বিবেচনায় সর্বাগ্রে যে নামটি ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে তিনি হলেন ইয়ানাগিতা কুনিসাে। সংগ্রহ ও বিষয়ভিত্তিক বিন্যাসেও তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। জাপানের কিছু কিছু লােককাহিনী অন্যান্য দেশের গল্পের সাথে কখনও কখনও কিছুটা মিশে গেছে। বিভিন্ন দেশের লােককাহিনীতেও তা বর্তমান। কোথাও কোথাও এর পরিমাণ কম আবার কোথাও এর পরিমাণে আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। ষষ্ঠ শতকে ভারতের বৌদ্ধধর্ম চীন ও কোরিয়া হয়ে জাপানে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে জাতক, পঞ্চতন্ত্রের বিভিন্ন গল্পের সঙ্গে জাপানের কিছু লােককাহিনীর মিল লক্ষণীয়। এই গ্রন্থে ২০টি গল্প আছে যা শিশু-কিশােররা প্রাণভরে গ্রহণ করবে। এর মধ্যে যেমন আছে বিষয় বৈচিত্র্য তেমনি আছে শিক্ষণীয় দিক। তাই একজন শিশু বা কিশাের এই গ্রন্থ পাঠে অনায়াসে গভীর মনোেযােগী হবে এবং উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করবে- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। | এভাবে শিশু-কিশােররা বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হবে। মূল পাঠ্যবই-এর বাইরে ওদের মানসিক বিকাশে এ সকল বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমাজে, রাষ্ট্রে দায়িত্বপূর্ণ নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আত্মপ্রত্যয়ী হবে। স্বদেশের লােক কাহিনীর পাশাপাশি বিদেশি গল্পকথা-কাহিনী পড়ে ওরা আরও জ্ঞান লাভ করবে। ওদের জানার পরিধি বিস্তৃত হবে। লেখাসমূহ পড়ে ওদের দিব্যদৃষ্টিও প্রসারিত হবে। নতুন নতুন বিষয় জানতে আগ্রহী হয়ে উঠবে আর কৌতুহলও বাড়বে। এভাবেই তারা জ্ঞানের নতুন নতুন ধারার সাথে পরিচিত হবে আর দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে এগিয়ে যাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। প্রসঙ্গত বলা কর্তব্য, আমার দুই শিশু সন্তানকে এই বইটির ২০টি গল্পই একাধিকবার শুনিয়েছি তারা যারপরনাই আনন্দিত ও উৎফুল্ল হয়েছে। এ থেকেও আমার বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে, এগুলাে শিশু-কিশােররা অনায়াসেই গ্রহণ করবে। শিশু-কিশােরদের জয় হােক। ওদের জন্য শুভাশীষ।