পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে জন্ম নেওয়া ইসমাইল বােহে হাতে গােনা সেই সব ভাগ্যবান চাইল্ড সােলজারদের একজন যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযােগ পেয়েছে। যুদ্ধের কারনে মাত্র বারাে বছর বয়সে ইসমাইল আপনজনদের হারিয়ে ফেলে। বেচে থাকার জন্য অন্যান্য শিশুদের সাথে অফ্রিকার বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার সময় ইসমাইল দেখেছে। মানুষ নিজের স্বার্থে কতটা নির্মম ও অমানবিক হতে পারে। নিরাপত্তা ও ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে বারাে বছর বয়সী ইসমাইলও এক সময় বাধ্য হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। ধীরে ধীরে অস্ত্রই তার রক্ষাকর্তা ও অন্নদাতায় পরিনত হয়। মারিজুয়ানা সহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের প্রভাবে রেপ গানের ভক্ত ইসমাইল খুব দ্রুতই কিলিং মেশিনে পরিনত হয়। হলিউডের সিনেমা থেকে শেখা নিত্য নতুন কৌশলে মানুষ খুন করা। ইসমাইলের শখে পরিনত হয়। রনাঙ্গনের কৃতিত্বের কারনে ইসমাইল জুনিয়র ল্যাফটেনেন্ট হিসেবে পদ্দোন্নতিও লাভ করে। রক্ত ও মাদক যখন ইসমাইলের অতীত জীবনের স্মৃতিগুলােকে প্রায় মুছে দিয়েছিল ঠিক তখনি স্বাভাবিক জীবনে পূর্নবাসনের জন্য ইসমাইলকে ইউনিসেফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মাদকাসক্ত খুনে চাইল্ড সােলজারদের পূনবাসন সহজ না হলেও অসম্ভব নয়। ইসমাইলও এক সময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং পূনর্বাচিত চাইল্ড সােলজারদের মুখপাত্রে পরিনত হয়। বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ন অঞ্চলে শিশু-কিশােরদেরকে চাইল্ড সােলজার হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুদের চাইল্ড সােলজারে শরিনেতা হওয়ার কারন কিংবা চাইল্ড সােলজারদের জীবনের করুণ পরিনতি নিয়ে বিশ্বমঞ্চে আলােচনা খুবই সীমিত। এ প্রেক্ষাপটে চাইল্ড সােলজার। ইসমাইল বােহের যুদ্ধ পূর্ববর্তী, যুদ্ধ কালীন এবং যুদ্ধ পরবর্তী স্মৃতিচারণ কেবলই ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নয়। বরং এ স্মৃতিচারণ আমাদেরকে বারবার মনে করিয়ে দেয় কারন যাই হােক, যুদ্ধ এক বিভীষিকার নাম। যুদ্ধ আমাদেরকে মানুষ হতে দানবে রূপান্তর করে। হলিউডি সিনেমার সাথে যুদ্ধের বাস্তবতার মিল অতি সামান্য। মৃত্যুর কালাে ছায়ার ভেতর বেঁচে থাকা ইসমাইল বােহের গল্পটা নিছকই যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারন নয়। বরং তার গল্পটি প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করা হাজারাে শিশুর জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।