মানুষ মানুষের ভেতর যে দেয়াল নির্মাণ করে বা প্রেম যে স্বাধীনতাকে দাবী করে কিংবা মনের মধ্যে যে স্বপ্ন কেবল মানুষকে স্বাধীন হতে যুদ্ধ করতে শেখায় তা একটি রাজনৈতিক বা ভৌগলিক আকাক্ষার যুদ্ধ দিয়ে সমাধান করা যায় না। ‘যুদ্ধদিনের গল্প’ যতটা ইতিহাসের ততটাই একটি নিখাদ পবিত্র ও অসম্পূর্ণ সেইসব দিনের প্রেমের গল্প। যেখানে অনেক চরিত্র এবং ঐতিহাসিক ঘটনা সংযােজিত। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার বেড়া থানায় কয়েক ঘর হিন্দু পরিবার ও মুসলিম পরিবারে তৈরি হয় অস্তিত্বের সংকট। পাকবাহিনি ও রাজাকারদের অত্যাচারে প্রাণভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। তাদের অসহায়ত্ব, হতাশা, মৃত্যু আতঙ্ক, প্রেম-বিরহ ইত্যাদি উঠে এসেছে 'যুদ্ধদিনের গল্প'-এ। পাশাপাশি পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্মাণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ এবং তৎকালীন জাতীয় নেতৃত্বের নানা ঘটনা নিপুণ দক্ষতায় চিত্রিত এ উপন্যাসে। রুদ্ধশ্বাসের সেই সময়ে একটি চরিত্র সেকান্দার যে কিনা বাউণ্ডুলে টাইপের ডানপিটে যুবক; একটি মুক্তিবাহিনীর দল গড়ে তােলে। তার প্রতিবেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী কলেজ পড়ুয়া মেয়ে পূরবী ভালেবাসে সেকান্দারকে। সেকান্দার তাকে পরিবারসহ যুদ্ধের সময় ভারতে পাঠিয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হয়। ক্যানসার ধরা পড়ে পূরবীর। মৃত্যু শয্যায় সেকান্দার তার পাশে দাঁড়ায়। পূরবী ও সেকান্দারের ভালােবাসা জ্বলন্ত সলতের মতাে আরও উস্কে ওঠে। কিন্তু ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-নিষেধের কারণে কেউ তা প্রকাশ করতে পারে না। পূরবীর মৃত্যু হলে, সেকান্দার বলে, “যাও পূরবী, এবার তুমি স্বাধীন।' যাপিত জীবনের এই জটিল মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দৈশিক-কালিক চাহিদাকেও হার মানিয়ে ভাব ও ভাবনার মানব-বৈশিষ্ট্যের চিরন্তন চক্রকে প্রকাশ করে যুদ্ধদিনের গল্প।