অতীতের হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকতার দরুন গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকায় বাঙালি জাতির ভাগ্যে শুধুমাত্র পরাজয়ের গ্লানি। আর এসব গ্লানি ও পরাজয়ের ইতিহাস দেশী ও বিদেশী ইতিহাস-বিদরা নানাভাবে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। বাঙালি জনগােষ্ঠীর রক্তাক্ত যুদ্ধ এবং বাঙালির মন মানসিকতার সঙ্গে আমাদের বুদ্ধিজীবীর একটি শ্রেণীর যােগাযােগ কেন ছিলাে না, কিংবা থাকলেও কেমন ছিলাে তার আনুপর্বিক আলােচনা করেছেন প্রখ্যাত কলামিস্ট এম আর আখতার মুকুল।br বামপন্থী কিংবা প্রগতিশীল হিসেবে আখ্যায়িত একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কম্যুনিস্ট চীনের ভূমিকার দরুন এঁদের অংশ বিশেষ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকায়, তারা এই ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে সযত্নে দূরে সরে ছিলেন কিংবা বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছিলেন । দ্বিতীয় বুদ্ধিজীবী গােষ্ঠী ছিলাে ধর্মান্ধ এবং ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়াশীল । এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি।br এদের জীবনের ইতিহাস হচ্ছে স্বৈরাচার ও খুনী শাসকগােষ্ঠীর পদলেহন ও জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। অবশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের প্রায় সকলেই মুক্তিযুদ্ধকালে হয় ঢাকায়, আর না হয় মুজিবনগরে অবস্থান করছিলেন। অবরুদ্ধ ঢাকা নগরীতে এসব বুদ্ধিজীবীদের এক অংশ স্ব স্ব চাকরিরত ছিলেন। মহল বিশেষের মতে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এসব বুদ্ধিজীবীর পলায়নি মনােবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলাে প্রকটভাবে। সত্যিকার ভাবে বলতে গেলে যে বিপুল সংখ্যক শ্রদ্ধাভাজন বুদ্ধিজীবী দুর্গম পথ অতিক্রম করে মুজিবনগরে গিয়েছিলেন, তাঁরা প্রবাসী সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন।br প্রাবন্ধিক মুকুল তাঁর ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা গ্রন্থে নিজে তীব্র সমালােচনার মুখােমুখি হবেন জেনেও আত্মবিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের জন্য বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে অনেকগুলাে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। দার্শনিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন এদেশের বুদ্ধিজীবীগণ অপাঙতেয় ও জীর্ণ পুরাতন এবং চৈত্রের ঝরাপাতার মতাে । আসলে এঁরাই হচ্ছেন প্রতিক্রিয়ার ছদ্মবেশী প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র, জাতীয়তাবাদ বির্তক এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে তাৎপর্যময়, নৃতন আঙ্গিকে বিশ্লেষণ ও তথ্যসমৃদ্ধ এ প্রবন্ধ গ্রন্থটি আপনাকে দেবে একই সাথে যুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি অভিনব ব্যতিক্রম ধারণা-যা আপনাকে নিঃসন্দেহে ঋদ্ধ করবে।
(জন্ম: ৯ আগস্ট, ১৯৩০ - মৃত্যু: ২৬ জুন, ২০০৪) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের চরমপত্রের পরিচালক, লেখক ও কথক ছিলেন। 'চরমপত্র' অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সাহস, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল৷ সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার থেকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন। তিনি একজন কলামিষ্ট৷ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫টি৷ আর আখতার মুকুল ১৯৪৫ সালে দিনাজপুর মহারাজা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি দিনাজপুর রিপন কলেজ(ব্রাঞ্চ) থেকে আই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৪৭ সালে৷ ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তিনি ১৯৪৮ সালে জননিরাপত্তা আইনে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং ১৯৪৯ সালে জেলখানা থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন৷ ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন৷[৩] ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈঠকের সময় যে ১১ জন ছাত্রনেতা উপস্থিত হন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। অন্যান্যরা ছিলেন ভাষাসৈনিক গাজীউল হক, মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সুলতানা, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মোমিন, এস এ বারী এটি, সৈয়দ কামরুদ্দীন হোসেইন শহুদ, আনোয়ারুল হক খান, মঞ্জুর হোসেন, আনোয়ার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এম আর আখতার মুকুল সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন৷ সাপ্তাহিক 'নও বেলাল', 'পাকিস্তান টুডে' , দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক সংবাদ ইত্যাদি পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। ১৯৫৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ইত্তেফাকের জন্মলগ্ন থেকে ১৯৬০ সালের জুলাই পর্যন্ত এই পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬১ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এম আর আখতার মুকুল আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইউডিআই-এর ঢাকাস্থ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন৷ একই সঙ্গে তিনি ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকায় এবং পরে দৈনিক পূর্বদেশেও চাকুরী করেন৷ এম আর আখতার মুকুল ১৯৭১ সালে প্রবাসী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে যোগদান করে তথ্য ও প্রচার দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে তিনি বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান৷ ১৯৭৫ সালের ১লা জানুয়রি তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেন৷ ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে এম আর আখতার মুকুল দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে যোগদান করেন৷ ১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন৷