‘মুহাম্মদ আল-ফাতিহ’ বই সম্পকিত কিছু কথাঃ তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি রোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল কনস্টান্টিনোপল। এর বিজয়ের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, মুসলিমদের। সেই সেনাবাহিনী ও সেনাপতি কতইনা উত্তম, যারা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। ফলে এই সৌভাগ্য অর্জন করার লক্ষ্যে যুগে যুগে মুসলিম সেনাপতি ও সেনাবাহিনী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ইতিহাস অপেক্ষায় ছিল সেই মহান ব্যক্তির সাক্ষাৎলাভে, যে সেই শহরের বুকে বিজয়-কেতন ওড়াবে এবং বাস্তবায়ন করবে প্রিয়নবির ভবিষ্যৎবাণী। শতাব্দির পর শতাব্দি অতিক্রান্ত হওয়ার পর অবশেষে দেখা মিলল সেই অমিততেজা বীর পুরুষের, যিনি পৃথিবীর বুকে বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। মানবেতিহাসের । যুদ্ধ-অধ্যায়ে অবিস্মরণীয় বিজয়-কৌশলের চিত্র এঁকেছিলেন। পানির জাহাজ ডাঙায় চড়িয়ে দখল করে নিয়েছিলেন রোমানদের শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কনস্টান্টিনোপল।। রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের সেই মহানায়ক ছিলেন সুলতান মুহাম্মদ আল-ফাতিহ। তার জীবন-উপাখ্যান নিয়েই রচিত হয়েছে এই বইটি। সেই সাথে উসমানি খিলাফতের উত্থান ও প্রথমদিকের উসমানি খলিফাদের ধারাবাহিক পরিচিতির কিঞ্চিৎ বিশ্লেষণাত্মক বিবরণও রয়েছে। আরবের প্রখ্যাত লেখক ও ইতিহাস-গবেষক ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবির কলমে এই মহান মুজাহিদের জীবনী পড়তে আশা করি ভালো লাগবে, পাঠকহৃদয় মুগ্ধ ও আলোড়িত করবে। ”সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ দ্য ব্যাটালিয়ন” বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : তাতার ও মঙ্গোল, মামলুক, আইন জালুত, শাজারাতুদ-দুর, সাইফুদ্দিন কুতুজ, রুকনুদ্দিন বাইবার্স এগুলো এখন বাংলাভাষাভাষী মানুষের কাছে পরিচিত নাম। এসব নিয়েই রচিত গবেষণাধর্মী এ ইতিহাসগ্রন্থটি। এ গ্রন্থটিতে মঙ্গোলদের মোকাবিলায় মামলুকদের সার্বিক তৎপরতা তুলে ধরা হয়েছে, তাদের সংগ্রামের কথা সুচারুরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। তেমনিভাবে সাইফুদ্দিন কুতুজের জীবনীও বর্ণিত হয়েছে। মঙ্গোলদের মোকাবিলায় যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার কথাও তুলে ধরা হয়েছে; সাথে কিছুটা বিশ্লেষণসহ আইন জালুতে মুসলমানদের বিজয়ের কারণগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে। শাসনক্ষমতা লাভের নীতিমালা এবং ইতিহাসের শিক্ষাও উদ্ঘাটন করা হয়েছে। আইন জালুতে বিজয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো ছিল—বিচক্ষণ নেতৃত্ব, স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি, সুস্পষ্ট লক্ষ্য, বিশুদ্ধ চিন্তাচেতনা, শাহাদতের আকাঙ্ক্ষা, উম্মাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্বহীনতা, যোগ্য লোকের কাছে দায়িত্ব অর্পণ, শক্তিশালী বাহিনী, জিহাদের পুনর্জাগরণ ও উপায়-উপকরণ গ্রহণ; তেমনিভাবে সামরিক প্রশিক্ষণের সাথে আদর্শিক দীক্ষা, ক্রমাগত প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিভা, সাইফুদ্দিন কুতুজের দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণ রাজনীতি, মামলুকবাহিনীতে বিজয়ী দলের গুণাবলি পাওয়া যাওয়া, পর্যায়ক্রমিক আদর্শ ও প্রতিরোধ-পরিকল্পনার উত্তরাধিকার, আলেমদের সাহায্য ও পরামর্শ চাওয়া, দুনিয়াবিমুখতা, মঙ্গোল রাজপরিবারে ভেতরগত দ্বন্দ্ব এবং জালিম ও অবাধ্যদের পাকড়াও করার ব্যাপারে আল্লাহর রীতি ইত্যাদি ছিল আইন জালুতে বিজয়ের অন্যতম কিছু কারণ। এ গ্রন্থের মাধ্যমে আমরা মামলুক শাসনামল সম্পর্কে ব্যাপক শিক্ষার্জন করতে পারব। এ বই আমাদের আরও অনেক গ্রন্থের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। ফলে সেগুলোর দ্বারাও আমরা উপকৃত হতে পারব। লায়ন অব দ্য ডেজার্ট বইয়ের সংক্ষিপ্ত লেখা উসমানি খিলাফতের প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত প্রায়। তখনই সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শকুনগোষ্ঠীর লোভাতুর চোখ গিয়ে পড়ে খেলাফতের অধীনস্থ আফ্রিকার মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর ওপর। তারা এসব ভূখণ্ডকে রাজাবিহীন রাজ্য হিসেবে ধরে নেয়। ইতালি ঝাঁপিয়ে পড়ে লিবিয়ায়। ১৯১১ সালে লিবিয়ার সমুদ্র উপকূলে নোঙর করে ইতালিয়ান রণতরীগুলো। পিঁপড়ের মতো বেরিয়ে আসে হাজার হাজার ইতালিয়ান সৈন্য। সিংহ যেমন আস্তানা ছেড়ে গর্জন করতে করতে বনের খোলা মাঠে বেরিয়ে আসে, তেমনি জাবালে আখজারের আল-কুসুর খানকাহ থেকে রণহুংকারে সদলবলে ময়দানে বেরিয়ে আসেন উমর মুখতার। বয়সের ভারে ন্যুব্জ সানুসি সুফি আন্দোলনের আধ্যাত্মিক জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। রাতের সাধক আর দিনের অশ্বারূঢ়। দাড়ি, টুপি আর আলখাল্লা পরিহিত দরবেশ। কুরআন-হাদিসের মশালধারী একজন জবরদস্ত আলেম। ঔদ্ধত সিংহের ন্যায় মৃত্যুর প্রতি একেবারে উদাসীন কতজন সাথিকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন দখলদার ইতালিয়ানদের বিরুদ্ধে। ১৯১১ থেকে নিয়ে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত এই ২০টি বছর প্রায় ২৬৩ রণক্ষেত্রে অত্যন্ত বীরদর্পে লড়াই করে যান। প্রতিটি যুদ্ধে চোখে শর্ষেফুল দেখতে থাকে ইতালিয়ান বাহিনী।ইতালি সরকার তার সাথে বারবার সমঝোতা করতে চেয়েছে; কিন্তু প্রতিবারই তিনি এককথা বলেছেন; যা ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে—‘আমরা আত্মসমর্পণ করি না; আমরা হয় জিতি, না হয় মরি।’ সেই মরুসিংহ উমর মুখতারের জীবন ও কীর্তি নিয়ে রচিত এই বইটি। "সুলতান আবদুল হামিদ" বইয়ের সংক্ষিপ্ত লেখা: আমরা আজ ইতিহাসের এমন এক দিকপাল মহান সুলতানের গল্প বলতে যাচ্ছি, যিনি ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বশেষ খলিফা; যিনি দীর্ঘ 30 বছরেরও বেশি সময় (1876-1909) শাসনকার্য পরিচালনা করেন। আমরা আজ আপনাদের সামনে এমন এক মহান নেতাকে পরিচয় করিয়ে দেব, যিনি ইউরোপীয় শক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন। প্রতিবাদে বলেছিলেন, ‘মহান আল্লাহই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ পাঠক এ বইটি থেকে জানতে পারবেন সেই সুলতানের জীবনচরিত, যিনি মানুষের মাঝে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়ে, অসংখ্য বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করে, মক্কা শহরকে বন্যা থেকে রক্ষার জন্য আধুনিক পানি সঞ্চালন পদ্ধতি চালু করে, ইস্তাম্বুল, ফিলিস্তিন ও মদিনা শহরকে সংযুক্ত করে ‘হিজাজ রেল-লাইন’ চালু করে আজও গোটা পৃথিবীর মাঝে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি তার সমসাময়কি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার জন্য প্রশংসিত ছিলেন। আপনি কি জানেন তিনি কে? তিনি সুলতান আবদুল হামিদ। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ? হ্যাঁ, সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের কথাই বলছি। তার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে পৃথিবীকে প্রায় সাড়ে ১৩০০ বছর শাসন করা খিলাফত পতনের ইতিহাস।
Title
ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবী রচিত ইসলামের চার বীর মহানায়কের বীরত্ব গাঁথা
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০