ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ, কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, আল ফিকহুল আকবর (বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা), “ইসলামী আকীদা" বইটির ভূমিকাঃ إن الحمد و تخمه وسنه ونستغفره ونعود بالله من شرور آتنا وسيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له وأشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، اللهم صل على محمد وأزواجه وره ما صليت على آل إبراهيم وبارك على محمد وأزواجه ويه كما باركت على آل মানুষের প্রকৃতি ও মানবজাতির ইতিহাস পর্যালােচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, সঠিক বিশ্বাসই মানুষের সকল সফলতা ও সৌভাগ্যের ভিত্তি। বিশ্বাসই মানুষের পরিচালিকা শক্তি। সঠিক বিশ্বাস মানুষকে মানবতার শিখরে তুলে দেয় এবং তার জীবনে বয়ে আনে অফুরন্ত শান্তি ও আনন্দ। আমরা জানি বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বয়ে ইসলাম। সঠিক বিশ্বাস বা ঈমানই ইসলামের মূল ভিত্তি। আমরা যত ইবাদত ও সঙ্কর্ম করি সবকিছু আল্লাহর নিকট কবুল বা গ্রহণযােগ্য হওয়ার শর্ত ঈমান। বিভিন্ন মুসলিম জনগােষ্ঠীর সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের মুসলিমদের বিশেষ তিনটি বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে: প্রথমত, বাংলার মুসলিমগণ ভক্তিপ্রবণ। তাঁরা তাঁদের ধর্ম ইসলামকে খুবই ভালবাসেন। আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল প্রতি তাঁদের ভক্তি খুবই বেশী। তাঁরা সাধারণত ইসলামী আচরণকে মেনে চলতে আগ্রহী। দ্বিতীয়ত, তাঁরা সরলপ্রাণ। সাধারণত ইসলামের নামে বা ধর্মের নামে যা বলা হয় তারা সহজেই তা মেনে নেন। তৃতীয়ত, তারা ভদ্র ও বিনয়ী। কোন বিষয়ে সত্য অবগত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তা মেনে নেন এবং নিজের ভুল স্বীকার করেন। অন্যান্য অনেক মুসলিম জনগােষ্ঠীর সদস্যদের মতে নিজের ভুল বুঝার পরেও তা আকড়ে ধরার বা তার পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করেন না। বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের মধ্যে দাও'আতী কর্মে লিপ্ত বিদেশী সমাজকর্মীরা বাংলার মুসলমানদের এসকল বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। `আল-ফিকহুল আকবর (বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা)’ বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: আল-ফিকহুল আকবারের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করতে যেয়ে দেখলাম যে, মুসলিম উম্মাহর বিভ্রান্তির উৎস ও বিষয়বস্তু দ্বিতীয় শতকে যা ছিল বর্তমানেও প্রায় তা-ই রয়েছে। খারিজীগণের ‘তাকফীর’ ও জিহাদ নামের উগ্রতা, জাহমী-মুরজিয়াদের মারিফাত ও ঈমান বিষয়ক প্রান্তিকতা, শীয়াগণের অতিভক্তি ও বাতিনী ইলমের নামে অন্ধত্ব এবং মুতাযিলীগণের বুদ্ধিবৃত্তিকতার নামে ওহীর অবমূল্যায়ন বর্তমান যুগেও একইভাবে উম্মাতের সকল ফিতনার মূল বিষয়। এগুলোর সাথে বর্তমান যুগে যোগ হয়েছে তাওহীদ বিষয়ক অজ্ঞতা ও শিরকের ব্যাপকতা। এ সকল ফিতনার সমাধানে সে যুগে ইমাম আবূ হানীফা ও অন্যান্য ইমাম যা বলেছেন বর্তমান যুগেও সেগুলোই আমাদের সমাধানের পথ দেখাবে। এ জন্য এ সকল বিষয়ে ফিকহুল আকবারের বক্তব্য ছাড়াও ইমাম আবূ হানীফা ও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্যান্য ইমামের বক্তব্য বিস্তারিত আলোচনা করেছি। স্বভাবতই এতে ব্যাখ্যার কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। বইটি মাযহাবীদের জন্য যেমন সহায়ক তেমনি যে কোন মুসলিমের জন্যও সহায়ক।
`আল-ফিকহুল আকবর (বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা)’ বইয়ের সূচীপত্রঃ প্রথম পর্ব: ইমাম আবু হানীফা ও আল-ফিকহুল আকবার /১৭-১৫৪ প্রথম পরিচ্ছেদ ইমাম আবু হানীফার জীবনী ও মূল্যায়ন /১৯-১২৬ ১. যুগ পরিচিতি /১৯ ২. সংক্ষিপ্ত জীবনী /২০ ২.১. বংশ ও জন্ম /২০ ২.২. শিক্ষাজীবন ও উস্তাদগণ /২১ ২.৩. অধ্যাপনা ও ছাত্রগণ /২৪ ২.৪. আখলাক /২৪ ২.৫. মৃত্যু /২৮ ৩. মর্যাদা ও মূল্যায়ন: গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা /২৯ ৪. দ্বিতীয় শতকের মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে আবু হানীফা /৩০ ৫. এ সময়ের দুটি অভিযোগ /৩৮ ৫.১. হাদীসের ময়দানে তাঁর পদচারণা কম /৩৯ ৫.২. ফিকহ ও আকীদা বিষয়ে তাঁর মতের বিরোধিতা 80 ৬. তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমাংশের সমালোচকের মূল্যায়ন /৪১ ৭. ইমাম আবু হানীফার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষাপট /৪৩ ৭.১. প্রসারতা ও ক্ষমতার ঈর্ষা /৪৩ ৭.২. মুতাযিলী ফিতনা ও সম্পৃক্তি /৪৪ ৭.৩. বিচার ও শাসন বনাম ইলম ও কলম /৪৫ ৭.৪. মাযহাবী গোঁড়ামি ও বিদ্বেষ /৪৫ ৮. ইমাম আবু হানীফার বিরুদ্ধে অভিযোগ সংকলন /৪৬ ৮.১. আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ ইবন হাম্বাল /৪৬ ৮.২. খতীব বাগদাদী /৪৭ ৯. আকীদা বিষয়ক অভিযোগ /৪৮ ৯.১. ইমাম বুখারী /৪৯ ৯.২. মুহাম্মাদ ইবনু উসমান ইবনু আবী শাইবা /৫১ ৯.৩. ইমামুল হারামাইন /৫১ ৯.৪. আব্দুল কাদির জীলানী /৫২ ১০. আকীদা বিষয়ক অভিযোগ পর্যালোচনা /৫৩ ১০.১. মুতাযিলী, জাহমী ও শীয়া আকীদা /৫৩ ১০.২. মুরজিয়া আকীদা /৫৪ ৯. কিয়ামতের আলামাত /৫০৫ ৯.১. কিয়ামাতের সময় ও আলামত /৫০৫ ৯.২. আলামাতে সুগরা /৫০৬ ৯.৩. আলামাতে কুবরা /৫০৭ ৯.৪. কিয়ামতের আলামত: মুমিনের করণীয় /৫০৯ ৯.৫. ইমাম মাহদী /৫১০ ৯.৬. ইমাম মাহদী দাবিদারগণ /৫১৪ ৯.৭. বিভ্রান্তির কারণ ও প্রতিকার /৫১৯ ৯.৮. দাজ্জাল /৫২১ ৯.৯. ঈসা (আ)-এর অবতরণ /৫২৮ ৯.১০, ঈসা (আ) হওয়ার দাবিদার /৫২৯ ৯.১১. ঈসায়ী প্রচারকদের প্রতারণা /৫৩০ শেষ কথা /৫৩২ গ্রন্থপঞ্জী /৫৩৩-৫৪৪
প্রথম পরিচ্ছেদ ইমাম আবু হানীফার জীবনী ও মূল্যায়ন ইমাম আবু হানীফার জীবনী প্রসঙ্গে সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও হাম্বালী ফকীহ আল্লামা যাহাবী (৭৪৮ হি) প্রসিদ্ধ একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: الإمامة في الفقه ودقائقه مسلمة إلى هذا الأمام. وهذا أمر لا شك فيه. وليس يصح في الأذهان شئ : إذا احتاج النهار إلى دليل “ইলমুল ফিকহ ও এর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ বিষয়ে নেতৃত্বের মর্যাদা এ ইমামের জন্য সংরক্ষিত। এতে কোনোই সন্দেহ নেই। “যদি দিবসকে প্রমাণ করতে দলিলের প্রয়োজন হয় তবে আর বুদ্ধি-বিবেক বলে কিছুই থাকে না”। অর্থাৎ দিবসের দিবসত্বে সন্দেহ করা বা দিবসকে দিবস বলে প্রমাণ করতে দলিল দাবি করা যেমন নিশ্চিত পাগলামি, তেমনি ইমাম আবু হানীফার মর্যাদার বিষয়ে সন্দেহ করা বা তার মর্যাদা প্রমাণের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করাও জ্ঞান জগতের পাগলামি বলে গণ্য হওয়া উচিত। তারপরও কিছুটা পাগলামি’ করতে বাধ্য হলাম । আমার একান্ত প্রিয়ভাজন কয়েকজন আলিম ও সচেতন মানুষ আমাকে অনুরোধ করলেন ইমাম আবূ হানীফার মূল্যায়ন বিষয়টি একটু বিস্তারিত আলোচনা করতে । কারণ ‘আল-ফিকহুল আকবার' গ্রন্থটি ইসলামী আকীদা বিষয়ে লিখিত সর্বপ্রথম মৌলিক গ্রন্থ। এ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু আলোচনার পূর্বে লেখকের মূল্যায়ন বিষয়ক অভিযোগ পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। বর্তমান যুগেও আরবী, বাংলা ও অন্যান্য ভাষার গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফার গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে বিতর্ক উত্থাপিত হচ্ছে। অনেক অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মনে এ বিষয়ক অস্পষ্টতা বা প্রশ্ন থাকতে পারে। এজন্য তাঁর জীবনী অতি সংক্ষেপে আলোচনা করে তার মূল্যায়ন বিতর্কটি বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করলাম। ১. যুগ পরিচিতি মুসলিম উম্মাহর প্রসিদ্ধ চার মুজতাহিদ ফকীহের মধ্যে ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হি) প্রথম। তিনি ছিলেন তাবিয়ী প্রজন্মের । ইমাম মালিক ইবন আনাস (১৩-১৭৯ হি) ও ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ইদরীস শাফিয়ী (১৫০-২০৪ হি) উভয়ে তাবি-তাবিয়ী প্রজন্মের। আর ইমাম আহমদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন হাম্বাল (১৬৪২৪১হি) ছিলেন তাবি-তাবিয়ীদের ছাত্র পর্যায়ের। রাহিমাহুমুল্লাহু: মহান আল্লাহ…