আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে পদার্পণ করেছি। মানবজাতি ও মানবসভ্যতা অতীতে এমন বিস্ময়কর পরিবর্তন এবং অভ‚তপূর্ব রূপান্তর আর কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং ডিজিটাল জগতের সম্মিলন ঘটাচ্ছে। সব শাস্ত্র, অর্থনীতি, শিল্প এই বিপ্লব দ্বারা প্রভাবান্বিত। এই বিপ্লবের গতি অভূতপূর্ব। ইতোমধ্যে ন্যানোপদার্থ তৈরি হয়ে গেছে, যেগুলো লোহা থেকে ২০০ গুণ শক্ত এবং মানুষের চুলের ১০ লাখ ভাগের ১ ভাগ। শীঘ্রই ত্রিমাত্রিক ছাপাখানায় মানবযকৃৎ তৈরি হতে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বইটির লেখক অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াব বিশ^খ্যাত অর্থনীতিবিদ, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী সভাপতি। ‘ঞযব ঋড়ঁৎঃয ওহফঁংঃৎরধষ জবাড়ষঁঃরড়হ’ বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বইটিতে তিনি নবপ্রযুক্তি বিপ্লবের রূপরেখা সরকার, ব্যবসায়, সুশীল সমাজ এবং জনগণের ওপরে যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা আলোচনা করেছেন। অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াব একজন জার্মান প্রকৌশলী ও অর্থনীতিবিদ। তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী কমিটির সভাপতি। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ১৯৭১ সালে তিনি এই ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। প্রগতিশীলতা মানবসভ্যতার ওপরে কতখানি প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে ক্লাউস শোয়াবের ভাবনা সবাইকে আলোড়িত করে। মি. শোয়াবের এ বইটি ৩৩টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ছোঁয়ায় ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন ও যে কোন ব্যবস্থাপনাকে মানুষ সবসময়ই একটা ক্রমাগত রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রূপান্তরে ব্যাপকতা এসেছে। অভাবিত গতিতে আমরা চতুর্থ শিল্পবিল্পব নামক একটা প্রযুক্তিগত বিপ্লবের দিকে যাচ্ছি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের জীবনযাত্রা, কাজ করার এবং একের সঙ্গে অপরের সম্পর্কিত হওয়ার মৌলিক পদ্ধতিগুলো আমূল পরিবর্তন করে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা গত দিক থেকে এটি মানব বিকাশের একটি নতুন অধ্যায় যেখানে পণ্য ও সেবার চাহিদা-নকশা, শিল্প উৎপাদন ও বাজারজাতকরণকে সংজ্ঞায়িত ও নিয়ন্ত্রিত করবে তথ্য, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক অটোমেশন। বহু ধারার ফিউশন প্রযুক্তির সমন্বয়ে ঘটমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বৈশিষ্ট্যগতভাবে জীবন ও ব্যবসার শারীরিক, ডিজিটাল ও জৈবিক ক্ষেত্র গুলোর মধ্যে আশ্চর্যজনক সমন্বয় করবে, এদের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনবে কিংবা কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পর্কগুলো আরও জটিল ও অনিয়ন্ত্রিত করে তুলবে। বাংলাদেশ মূলত কৃষি শ্রমিক, তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিক-এই তিন ধরনের স্বল্প দক্ষ মানবসম্পদ দ্বারা চালিত অর্থনীতির দেশ। আমাদের অবকাঠামো, শিক্ষাব্যবস্থা, বৈদেশিক শ্রম বাজার ও সার্বিক কর্মসংস্থান- চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অটোমেশনে পড়ে কি ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, এই উপলব্ধি গুলোই এই পুস্তকের মূল আলোচ্য বিষয়। আমাদের অদক্ষ-স্বল্প দক্ষ শ্রমবাজারকে রূপান্তরিত করে যুগপোযুগি ও কারিগরিভাবে দক্ষ করা, বর্তমানের অর্জনগুলোর চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি নির্ণয়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন কর্মসংস্থান সম্ভাবনা আবিষ্কার, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল তৈরি, অবকাঠামো তৈরির চ্যালেঞ্জ নেয়া এবং একটা কর্মসংস্থান মূখী টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়া- এই পুস্তকের পর্যালোচনার বিষয়। একটা শিল্প বিপ্লবের গতি, পরিসর এবং গভীরতা ঠিক কীভাবে বিকশিত করা উচিত, তা নিয়ে বিশ্বের দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ দরকার। নতুন প্রযুক্তিগুলোর প্রয়োগ কীভাবে শ্রম বৈষম্য ও আর্থ-সামাজিক ঝুঁকি হ্রাস করবে, মানবিক মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করবে- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন উপলব্ধি তৈরির গুরুত্বও দেয়া হয়েছে এই পুস্তকে।
Title
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, বাংলাদেশ ও এর দার্শনিক ভাবনা নিয়ে ৩ টি বই