"ফুড কনফারেন্স" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সাম্রাজ্যবাদী সামন্তবাদী শােষণের ফলে দুনিয়ার শস্যভান্ডার সুজলা-সুফলা বাংলা ১৩৫০ সালে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা মর্মান্তিক লােক-ক্ষয়ী আকালের শিকার হইয়াছিল। বাংলার দুইটি শ্রেষ্ঠ প্রতিভা এই হৃদয়বিদারক আকালের বাস্তব ছবি আঁকিয়াছিলেন; শিল্পী জয়নুল আবেদিন আঁকিয়াছিলেন ব্রাশ ও তুলিতে আর আবুল মনসুর আঁকিয়াছিলেন নকশার কলমে। তাঁর অমর সৃষ্টি ফুড় কনফারেন্সই এক নকশা। বেদনার তীব্র কশাঘাত। এই কনফারেন্স পড়িয়াই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী অন্নদাশংকর রায় লিখিয়াছিলেন: ‘আয়না লিখিয়া আবুল মনসুর প্রাতঃস্মরণীয় হইয়াছিলেন আর ফুড-কনফারেন্স’ লিখিয়া তিনি অমর হইলেন। অনেক আগের কাহিনী ও চিত্র। ইতিমধ্যে আমরা স্বাধীনতা লাভ করিয়াছি কিন্তু সে চিত্র আজও তেমনি জীবন্ত ও বাস্তব। শস্যভান্ডারে আজও তেমনি আকাল চলিতেছে। তাই আমি ফুড-কনফারেন্স’কে নূতন সাজে সাজাইয়া পাঠকদের খেদমতে পেশ করিলাম। 'আয়না' ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা বাংলা সাহিত্যে ব্যঙ্গরচনার জগতে আবুল মনসুর আহমদের ‘আয়না’ একটি কালজয়ী গ্রন্থ। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত এই অবিস্মরণীয় ব্যঙ্গ গল্প-গ্রন্থের ভূমিকায় কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন,‘এমনি আয়নায় শুধু মানুষের বাইরের প্রতিচ্ছবিই দেখা সূচীপত্র *মনসুর-জীবনী *মনসুর-রচনা *মনসুর-সাহিত্য *ব্যঙ্গরচনা ও আয়না *আয়নার ফ্রেম : নজরুল ইসলাম *আবুল কালাম সামসুদ্দীন করকমলেষু *হুযুর কেবলা *গো-দেওতা-কো দেশ *নায়েকে নবী *লীডরে-কওম *মুজাদেহীন *বিদ্রোহী সংঘ *ধর্ম-রাজ্য *শব্দার্থ ও টীকা সারাংশ আবুল মনসুর আহমদের ব্যাঙ্গাত্মক রচনা। ব্যাঙ্গ রচনা হলেও গল্পের মাঝে সমাজের প্রধান সমস্যাগুলোর প্রতি তীব্র কটাক্ষ করা হয়েছে। ধার্মিকতার আবরণে সমকালীন সমাজের যে সব ব্যাধি লেখক দেখেছেন, তারই মুখোশ উম্মোচন করেছেন। 'আয়না' বইয়ের প্রায় সব গল্পই ১৯২২ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে রচিত হলেও প্রায় একশ বছর পরও আয়না দেখে মনে হয় এতো বর্তমান সময়েরই আয়না।
বিশিষ্ট লেখক, দেশভাগের সময়কালের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ এবং শক্তিমান সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন বিচিত্র গুণের অধিকারী একজন মানুষ। আবুল মনসুর আহমদ এর বই সমূহ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তিনি বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গাত্মক লেখকদেরও একজন। ‘আয়না’, ‘ফুড কনফারেন্স’, ‘গালিভারের সফরনামা’র মতো কালজয়ী ব্যঙ্গরচনাগুলো আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইটি হলো তার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত বই। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত এ বইটি তার আত্মজীবনীমূলক রচনা। এছাড়াও ‘আত্মকথা’, ‘শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু’- বইগুলোও স্মৃতিচারণমূলক। আবুল মনসুর আহমদ এর বই সমগ্রতে আরো আছে ‘সত্য মিথ্যা’, ‘জীবনক্ষুধা’, ‘আবে হায়াত’, ‘বাংলাদেশের কালচার’, ‘আসমানী পর্দা’, ‘বেশি দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা’ ইত্যাদি। আবুল মনসুর আহমদের জন্ম ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে। ১৯১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হন আইন পড়বার জন্য। পড়ালেখা করার সময় খিলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন ব্যবসা করেন। এরপর কলকাতায় গিয়ে সাংবাদিক জীবনের সূচনা করেন। ইত্তেহাদ, সুলতান, নাভায়ু, মোহাম্মদী, নবযুগসহ বেশ কিছু পত্রিকায় কাজ করেন তিনি। দেশভাগের কিছুকাল পূর্বেই ইত্তেহাদের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ দায়িত্বে থেকে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনেও ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে আবুল মনসুর আহমদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুসারী ছিলেন। ১৯৪০ এর দশকে সক্রিয়ভাবে পাকিস্তান আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯৫৪ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। আইয়ুব সরকারের আমলে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কারারুদ্ধ হন। বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের অন্যতম এক প্রতিষ্ঠাতা তিনি।