তাফসীরে মুযিহুল কুরআন প্রায় দুশ বছরের পুরোনো তাফসীর গ্রন্থ। এর মূল লেখক মুসলিম জাহানের একজন প্রসিদ্ধ ইসলামী ব্যক্তিত্ব—হযরত শাহ আব্দুল কাদের দেহলভী রহ. (১৭৫৩-১৮৫৪)—এ উপমহাদেশে ইসলামের ঝাণ্ডা বহনে অন্যতম আলোর দিশারী। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে তিনি কুরআনের এই তাফসীর লিখেছেন যা ইলহামী তাফসীর হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এর তরজমা পারিভাষিক হলেও বিস্ময়কর আঙ্গিকে মূলানুগ। অধিকন্তু তরজমার ক্ষেত্রে কুরআনের সমঝ ও মর্মার্থ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে; বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে সহসা কোনো দুর্বলতা কিংবা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় না এবং কুরআনের মূল অর্থের বাইরে অতিরিক্ত কোনো শব্দও এতে যোগ করা হয়নি। বলা যায়, কুরআনের শব্দসংখ্যা আর উর্দু তরজমার শব্দসংখ্যা সমান না হলেও কাছাকাছি তো বটেই। তাছাড়া আরবী ব্যাকরণের বিষয়গুলো অনূদিত ভাষায়ও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এ উপমহাদেশে তাফসীরে মুযিহুল কুরআন ছাপানোর পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত উলামায়ে কেরাম কুরআন মাজীদের নতুন কোনো তরজমা লেখার প্রয়োজনবোধ করেননি। তবে ভাষার প্রাচীনতার কারণে কোথাও কোথাও শব্দের আধুনিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন ছিল। এ কাজটিও সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন মাওলানা আখলাক হুসাইন কাসেমী সাহেব। তিনি এ গ্রন্থের কঠিন শব্দের বিশ্লেষণ ও জটিলতা সমাধানে সুবিশেষ মেহনত-পরিশ্রম করেছেন। দীর্ঘ বারো বছর ধরে পুরো গ্রন্থটিকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন এবং প্রায়াজনীয় টীকা ও ব্যাখ্যা সংযোজন করেছেন। এ তরজমা ও তাফসীর যদি নিবিষ্টচিত্তে গভীর মনোযোগ ও আগ্রহ নিয়ে পড়া যায়, তবে অবশ্যই পাঠকমাত্রই এর জ্ঞানগত, ভাষাগত ও আত্মিক সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন এবং কুরআন মাজীদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, নিগূঢ় রহস্য, প্রজ্ঞা ও বিস্ময়কর সূক্ষ্ম বিষয়াদি জানার এক অনির্বচনীয় সুযোগ লাভ করবেন।