"সত্যপীরনামা" বই এর ফ্লাপের লেখা ‘সত্যপীরনামা’ এক লোকায়ত অনুভবের কথকতা। ভুবনায়নের দুনিয়ায় আত্মনির্মাণের হাতছানি। মগ্নতার, অন্তর্ভাবনার পদযাত্রা। ভিন্ন ভিন্ন পালায় উঠে আসে ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের স্পষ্ট পদচিহ্ন। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তার প্রশস্ত পরিসর। উচ্চবর্গের সাহিত্যকর্মের সমান্তরালে লেখা হত লোকবৃত্তের রচনা। ফকির দরবেশদের অলৌকিক প্রভাবের সাথে মিলে মিশে পৌরাণিক ও লৌকিক দেবদেবীর নবনির্মাণ সমাজে স্বীকৃত ছিল। গ্রামেগঞ্জে দেখা যেত কথকতা, গান ও নাট্যের বৃহৎ পরিসর। লেখা হতে থাকে পাঁচালি। বাংলা ছাড়িয়ে অন্য অঞ্চলেও তার উপস্থিতি। ‘সত্যপীরনামা'র উদ্ধৃত অংশগুলো সেই নিবিড় ক্ষেত্র অনুসন্ধানের প্রত্যক্ষ চিহ্ন। রাষ্ট্রীয় সংঘাত থেকে সাহিত্যের উদ্ভব পরম্পরাসিদ্ধ এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্ৰক্ৰিয়া । ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইতিহাসের ঘূর্ণিপাক। তাই ‘সত্যপীরনামা' প্রকারান্তরে ইতিহাসেরও উপলব্ধি। তত্ত্ব ও তথ্যে ‘কথাবিস্তার' অংশটি তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। সুধারানির সাথে কথকতা আখ্যানের মত স্বাদু। পাঁচালির নায়িকা আর সুধারানি অভিন্ন হতে থাকেন। আরো একবার পাঠক উপলব্ধি করবেন পূর্ণ সৌন্দর্যের সন্ধান ইউটোপিয়া ছাড়া কিছু নয়। পূর্ণ প্রেম ও সৌন্দর্যের দিকে মানুষ যাত্রা করে কেবল। পৌঁছাতে পারে না কোনদিনই।
রমাপ্রসাদ নাগ আশির দশকে অমিয়ভূষণ সংক্রান্ত গবেষণায় প্রথম পি.এইচ.ডি অর্জন করেছেন। পেশায় নিয়ত অস্থির। পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে একটি কেন্দ্রীয় সরকারি কলেজে স্থায়ীপদে কয়েক বছর পড়িয়েছেন। চাকরি শেষে এখন পূর্ণ সময়ের লেখক। উত্তরবাংলার লোকনাটক, পরিবেশ এবং প্রকৃতি তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়। অমিয়ভূষণ পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৩ সালে। ২০১২ সালে অমিয়ভূষণ স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত।