মহাত্মা গান্ধী প্রথম অধ্যায় ক্ষুদ্রকায় দূর্বল মানুষ, শীর্ণ মুখ, প্রশান্ত দুটি চোখ, বাহিরের দিকে প্রসারিত দুটি কান। মাথায় সাদা রঙের একটি পাগড়ি, পরনে মোটা সাদা রঙের একখানি থান, অনাবৃত দুটি পা। খাদ্য চাউল, ফল ও জল। ভূমিতে শয়ন, স্বল্পকাল মাত্র নিদ্রা; অক্লান্ত কাজ। তাঁহার দৈহিক প্রকাশ আদৌ গ্রাহ্য করিবার মতো নয়। তাঁহাকে প্রথমে দেখিলেই এক বিরাট ধৈর্য ও অসীম ভালোবাসার প্রতিমূর্তি বলিয়া মনে হয়। পিআসন যখন তাঁহাকে ১৯১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখেন, তখন ঋষি ফ্রান্সিস্ অব আসিসির কথা তাঁহার মনে পড়িয়াছিল। পরম শত্রুর প্রতিও তাঁহার অগাধ স্নেহ, অপার সৌজন্য! অসীম তাঁহার দীনতা। সদা সচেতন, চঞ্চল, ‘আমি ভুল করিয়াছি' এ-কথা স্বীকার করিতে যেন তিনি সর্বদা প্রস্তুত। তিনি কদাপি তাঁহার ভুল গোপন করেন না; কখনো আপোষের মধ্যে আসেন না, কখনো ক‚টনীতির আশ্রয় লন না, কখনো বক্তৃতায় মাত করিতে চান না—বরও বক্তৃতার কথা তিনি ভাবেনও না। তাঁহার ব্যক্তিত্ব যে স্তুতি ও সম্বর্ধনার জন্য জনসাধারণকে স্বতঃই ব্যাকুল ও ব্যগ্র করে, তাহাও তিনি পছন্দ করেন না। অনেক সময় এই সম্বর্ধনার ভীড়ে তাঁহার ক্ষুদ্র শীর্ণ দেহখানি নিষ্পেষিত দলিত হইবার সম্ভাবনাও ঘটে। তখন তাঁহার বন্ধ, মওলানা শওকত আলি নিজের বিপুল সবল দেহের আশ্রয়পটে তাঁহাকে সকল বিপদের হাত হইতে সযত্নে রক্ষা করেন। এই মহাপুরুষ, মহাত্মা, জনসাধারণের স্তুতি-তোষণে একেবারে তিতি-বিরক্ত হইয়া পড়েন। অন্তরে অন্তরে গণ-শব্দে তাঁহার অবিরল অবিশ্বাস, গণশাসন বা বিশৃঙ্খল জনতার প্রতি তাঁহার পরম ঘৃণা। মাত্র কতিপয়ের সান্নিধ্যেই তিনি স্বস্তি এবং সহজ ভাব অনুভব করেন। নির্জন নৈঃশব্দ্যে থাকিতে তিনি ভালোবাসেন, কারণ তখন তিনি বিধাতার নীরব নির্মল বাণী নিতে পান!.....