বিবরণী আত্মা নিয়ে কি বলে বিজ্ঞান? অনুভূতি আসলে কি জিনিস? আপনি কেন কনশাস, মোবাইলটা কেন নয়? স্পেস টাইম রিলেটিভিট এগুলো কি জিনিস? কি আছে ব্ল্যাকহোলের অতলে? এইসব হাই থটের কথা চলবে, পাশে পাশে চলবে আড্ডা। আমরা তাবু গাড়ব কার্বোনিফেরাসের গহীন কালো জঙ্গলে, পাশ দিয়ে উড়ে যাবে বিরাট বিরাট পোকামাকড়। ঢু মেরে দেখে আসবো নিউট্রন তারার ভেতরটা, তারপর উড়ে বেড়াবো ফোটনের দেশে। কার্ল লিচির সাথে ঢুকে যাবো মানুষখেকো গাছের জঙ্গলে। ঝড়ের রাতে ডুব দিবো গভীর সমুদ্রে, তারা করবে শনিসরাস। তারপর যখন হাওড়ের বুকে উথাল পাথাল জোছনা নামবে, আমরা ফিরে আসবো মাটির পৃথিবীতে। নৌকার ছইয়ের ভেতর বসে ফিস ফিস করে ভূতের গল্প শুনবো। রিলেটিভিটির গল্প আমি সূর্যে যাব। মরার শখ জাগসে, সূর্যে যেয়ে মরবো। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলো দূরে, আলোর যেতে টাইম লাগে ৮ মিনিট। আগের ধারনাঃ নরমাল রকেট নিলাম। সূর্যে যেতে ১ বছর লাগবে। শক্তি দিলাম। বেগ বাড়বে। অনেক শক্তি দিলাম। অনেক বেগ বাড়বে। ১ সেকেন্ডে সূর্যে যাব। অসীম শক্তি দিলাম। শূন্য সেকেন্ড লাগবে। রিলেটিভিটির ধারনাঃ সব ঠিক আছে। অনেক শক্তি দিবো। ১ সেকেন্ডে সূর্যে যাব। জাস্ট ছোট্ট একটা চেঞ্জঃ বেগ লিমিট সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলো। তাই : ১। আমি দেখব সূর্য কাছে চলে এসেছে। দূরত্ব কম, সময়ও কম, বেগ ৩লক্ষ কিলোর নিচে। ২। দুনিয়াবাসী দেখবে, দূরত্ব ১৫ কোটি কিলো, সময় ৮ মিনিটের বেশি , বেগ ৩ লক্ষ কিলোর নিচে। আগে মনে করতাম আমার আপনার সময় সেম, এখন দেখি সময় আলাদা, বেগ সেম। শেষ। এই পর্যন্ত পড়ে একটু চিন্তা করতে হবে। পুরো লরেঞ্জ রূপান্তর শেষ করে দিয়েছি। চিন্তা করেও না বুঝলে নিচে যাওয়া যেতে পারে। .. . ১। কাল দীর্ঘায়ন : আমি রকেটে বসে একটা মশা মেরেছি ১ সেকেন্ডে। দুনিয়াবাসি দেখবে আমি ৮ মিনিট ধরে আস্তে আস্তে মশা মেরেছি। পৃথিবীতে মেসি বলে কিক করেছে। আমি দেখব ৮ মিনিট ধরে কিক হয়েছে। ২। দৈর্ঘ্য সঙ্কোচন : আমি দেখব সূর্য পৃথিবী সব চ্যাপ্টা হয়ে গেছে, রাস্তাও ছোট হয়ে গেছে। দুনিয়াবাসি দেখবে আমি চ্যাপ্টা হয়ে গেছি ৩। ভর যোগ : শূন্য থেকে অসীম পর্যন্ত বেগটা এখন ০ থেকে ৩ লক্ষের মধ্যে কমপ্রেসড অবস্থায় আছে। আগে অসীম বেগে যেতে অসীম শক্তি লাগত, এখন আলোর বেগে যেতে লাগে। গতিশক্তি অসীম, বেগ ফিক্সড, তাই ভর বাড়তে বাড়তে অসীম হবে। আমি দেখব পৃথিবী ভারি হয়ে গেছে, দুনিয়াবাসি দেখবে আমি ভারি হয়ে গেছি। সামারিঃ দুনিয়াবাসি দেখবে চ্যাপ্টা, ভারি, মারাত্মক স্লো নাঈম পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। আমি দেখব, পৃথিবীর মেয়েরা সব চ্যাপ্টা, ভারি, স্লো হয়ে গেছে, এই দুনিয়ায় থেকে আর কোন লাভ নাই চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স কণা আর তরঙ্গ - যিনি কণা, তিনিই তরঙ্গ। বিজ্ঞানের জানা ইতিহাসে সবচেয়ে রহস্যময় জিনিসগুলোর একটা হচ্ছে - তোমার শরীরের প্রতিটা কণা, প্রতিটা ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রন, আলোর কণা ফোটন, এমনকি তুমি নিজেও নাকি কখনও কণা কখনও তরঙ্গ! যে ব্যক্তি কখনও কণা কখনও তরঙ্গ তার নিয়ম কানুন বড় অদ্ভুত। কেউ কেউ বলে সে নাকি একই সাথে দুই জায়গায় থাকতে পারে। সময়ের উল্টাদিকে চলতে পারে। আলোর বেশি বেগে যোগাযোগ করতে পারে! জন্ম দিতে পারে প্যারালাল ইউনিভার্সের! এই যে একটা জিনিস কখনও কণা কখনও তরঙ্গ, এ জিনিস নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে তার নাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এখানে লর্ড রাদারফোর্ড হুঁকায় টান দিতে দিতে তোমাদের শোনাবেন নিউক্লিয়াসের গল্প, নীলস বোর শোনাবেন আলো আর রঙের কাহিনী। স্টার্ন আর গারল্যাক শোনাবেন আধিভৌতিক স্পিনের কেচ্ছা। টমাস ইয়াং আর ডি ব্রগলি গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোমাদের নিয়ে যাবেন তরঙ্গের দুনিয়ার। হাইজেনবার্গ ঘুরিয়ে আনবেন অনিশ্চয়তার জগৎ থেকে, পল ডিরাক চেনাবেন কোয়ান্টাম কম্পিউটার, জন বেল ঘুরিয়ে আনবেন এনট্যাঙ্গেলমেন্টের দুনিয়া থেকে, আর নিষ্ঠুর বিড়াল মানব শ্রোডিঙ্গার জটিল সব সমীকরণ এঁকে বুঝাবেন তরঙ্গ ফাংশন! একেবারে বেসিক থেকে শুরু করে গল্প, গ্রাফ আর ম্যাথ দেখতে দেখতে আমরা ঢুকে যাবো কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গভীরে। সাথে থাকবেন আক্কাস আলি, বক্কর ভাই আর জসিম। তো, হয়ে যাক তাহলে?
নাঈম হোসেন ফারুকী অতিমাত্রায় বিজ্ঞানপ্রেমী, কারও কাছে বিজ্ঞানবাদী, কারও কাছে আবার সুপারহিউম্যান বিজ্ঞান লেখক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন ‘কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নিয়ে দেশের শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট থেকে। কিন্তু থিওরেটিক্যাল ফিজিক্সের ওপর চরম মাত্রার ভালোবাসা নিয়ে কি বুয়েটে পড়েও, ইঞ্জিনিয়ার হয়েও, বসে থাকা যায়? লেখক তাই গড়ে তুলেছেন বিজ্ঞানভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান’ ফেসবুক গ্রæপ। তাঁর প্রকাশনায় ‘টিম ব্যাঙাচি’র মাধ্যমে বের হয় অনলাইন সায়েন্স ম্যাগাজিনÑ‘ব্যাঙাচি’। তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলোর মাঝে স্থান পায় অসম্ভব সরল বর্ণনা আর সমীকরণের ‘অর্থ’ বোঝার চেষ্টা। প্রচলিত ‘ফিজিক্স মানে শুধুই নিরস অঙ্ক’Ñ এই ধারণার চরম বিরোধী তিনি। তাঁর ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ বইটি পায় ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা। এরই হাত ধরে লেখকের এবারের বইটি ‘চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি’, যেখানে লেখক দেখিয়েছেন জেনারেল রিলেটিভিটির মতো জটিল একটা জিনিসকে কত্ত আনন্দের সাথে শেখা সম্ভব।