বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে উল্লেখ করেন '... হানাদার পাকিস্তানিরা যাওয়ার পূর্বে ১৬ ডিসেম্বরের আগে কারফিউ দিয়ে ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গায় আমার বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল । উদ্দেশ্য ছিল- বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করব, ধ্বংস করব- বাঙালি স্বাধীনতা পেলেও এই স্বাধীনতা রাখতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ স্বাধীনতা রক্ষা হয়েছে। বাংলাদেশ দুনিয়ায় এসেছে। বাংলাদেশ থাকবে। কেউ একে ধ্বংস করতে পারবে না। আমি দুনিয়ার প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব চাই । কারো সাথে দুশমনি করতে চাই না। সকলের সাথে বন্ধুত্ব করে আমরা শান্তি চাই। আমার মানুষ দুঃখী, আমার মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। আমি যখন বাংলাদেশ সরকার পেলাম, যখন পাকিস্তানের জেল থেকে বের হয়ে স্বাধীন দেশে। এলাম, তখন আমি শুধু বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই পেলাম। ব্যাংকে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ছিল, আমাদের গোল্ড রিজার্ভ ছিল না। শুধু কাগজ নিয়ে। আমরা সাড়ে সাত কোটি লোকের সরকার শুরু করলাম । গত তিন-চার বছরে না হলেও বিদেশ থেকে ২২ কোটি মন খাবার বাংলাদেশে আনতে হয়েছে । আর একটি কথা- কেন সিস্টেম পরিবর্তন করলাম? সিস্টেম পরিবর্তন করলাম দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতা বন্দুকের নলে নয় । আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতা জনগণের কাছে । ‘আপনাদের মনে আছে, আমার কথার মধ্যে শুধু কথা ছিল- রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে, যদি দুঃখী মানুষেরা পেট ভরে ভাত খেতে না পায়, কাপড় পরতে না পারে, বেকার। সমস্যা দূর না হয়, তাহলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না। সরকারি আইন করে কোনোদিন দুর্নীতিবাজদের দূর করা। সম্ভব নয়, জনগণের সমর্থন ছাড়া । আপনারা সংঘবদ্ধ হোন। ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্গ গড়তে হবে। দুর্নীতিবাজদের খতম করার জন্য, বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচন করার জন্য পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে, কিন্তু চোর রেখে গেছে। এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম সরকারি কর্মচারীদের বলি- মনে রেখো, এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয় । যে লোককে দেখবে- তার চেহারাটা তোমার বাবার মতো, তোমার ভাইয়ের মতো। ওরই পরিশ্রমের পয়সায় তুমি মাইনে পাও। এই যে কী হয়েছে সমাজের । সমাজব্যবস্থায় যেন ঘুণ ধরে গেছে । এই সমাজের প্রতি চরম আঘাত করতে চাই । যে। আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানিদের, সে আঘাত করতে চাই এই ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থাকে । আমি এ লক্ষ্য অর্জনে আপনাদের সমর্থন চাই।'
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।