সমাজের প্রতিটা স্তরেই ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী রচিত হয় এবং চলতেই থাকে। এইসব কাহিনি, অনুভূতি, ইচ্ছে অনিচ্ছে নিয়ে জীবন এগিয়ে যেতে থাকে। কত না বলা যন্ত্রণা নিয়ে আমরা জীবন যাপন করি এই উপন্যাসের একটি চরিত্র ‘মুনা আহামেদের’ মতো! ধর্ম বদলে পারিবারিক গ্রহনযোগ্যতা পাবার পরেও ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া নিগ্রহ, অপমান আবার অনাত্মীয় কারোর থেকে পাওয়া অপার ভালোবাসা আর সম্মান নিয়ে জীবন যাপন করেছে মুনা আহামেদ। শেষ জীবনে ভালোবাসাময় সেই মানুষটাকে পাবার সম্ভাবনা পূর্ণ থাকার পরেও মুনা অনিশ্চয়তায় ভোগে, কিন্তু মুনার মেয়ে রায়না গতানুগতিক সমাজ ব্যবস্থার বাইরে বের হয়ে অন্যরকম কিছু ভাবতে চায়, এই চাওয়াটা মুনাকে স্তস্তি দিলেও প্রথম স্বামী তামহানকে মুছে দিয়ে রায়নার বাবাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারে না। রেবেকাদের মতো কত মেয়েই ভালোবেসে হেরে যায়, নিজের বাবা মায়ের পরিবার টানতে টানতে নিজের শখ, আহলাদ প্রয়োজনের কথা ভুলতে বাধ্য হয়। গুনগুনের মত হতভাগ্য কত রয়েছে আমাদের চারপাশে। স্বামীর প্রচণ্ড ভালোবাসা ফেলে তাকে বড় অসমেয়ে চলে যেতে হয়েছে। জাহি গুনগুনের স্বামী, গুনগুনের মৃত্যুর পর তার জীবন প্রায় থামতে বসেছিল; তার জীবন চলতে গুনগুনের বিকল্প কাউকে প্রয়োজন হয়েছে, সেখানে একজন মেধাবী হার্ট স্প্যাশালিস্ট জাহিবা আহমেদ খান জাহির জীবন তরী বইতে সহযোগী হয়েছে। এগুলো তো আমাদের সকল স্তরের সমাজেই বিদ্যমান! সেই সাথে প্রকৃতির অপার রহস্য কখনোসখনো আমাদের জীবনে ধরা দেয়; সেই রহস্য, আধ্যাত্মিকতা শধুই রহস্য, যা অমীমাংসিতই থেকে যায়। জীবন যাপনের গতিতে সকল রহস্যই উন্মোচিত হয় না। আমরা এক অপরের জীবনে কোনো না কোনোভাবে কাউকে না কাউকে জলছাপের মতো করে বয়ে বেড়াই। সেই জলছাপ কখনো সুখের হয় আবার কথনো অপার দুঃখের হয়, তারপরেও জীবনে নানান জলছাপ থেকেই যায়।