ড. ইয়াদ কুনাইবী কে আল্লাহ তাআলা মানুষের মনস্তত্ত্ব উপলব্ধি করার যোগ্যতা দিয়েছেন। সাথে কুরআন-হাদিসের নিগূঢ় রহস্য ও যোগসূত্র উদ্ধার করার অভাবিত ইলমি যোগ্যতাও আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। যে বিষয়ে কলম ধরেন, তাতে অভিনবত্ব সৃষ্টি করেন। বলেন ও লেখেন অনেকেই; আর প্রত্যেকেরই নিজস্বতা রয়েছে। তবে ড. ইয়াদ কুনাইবীর স্বকীয়তা অনন্য সাধারণ। জটিল কোনো বিষয়ও পাঠককে একেবারে জলবৎ তরলং করে বোঝানোর সক্ষমতা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। এই গ্রন্থেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এই বিষয়ে আরো অনেকেই বলেছেন, লিখেছেন; তবে তাঁর চিন্তা ও কুরআন-হাদিসের গবেষণালব্ধ মর্মের নির্যাস পাঠককে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। বিপদে ধৈর্যধারণ কেনো করবো? কিভাবে পাহাড়সম মুসিবত মাথায় নিয়েও শান্ত-স্থির থাকতে পারবো? বিপদে পড়ে আমরা হতাশায় ভুগি, এ থেকে কিভাবে বাঁচতে পারবো? সর্বোপরি এই বিপদকে রবের নিয়ামত হিসেবে উপভোগ করবো কিভাবে? এইসব বিষয়সহ আরও নানান বিষয়ের সমাধান দারুণভাবে আলোচনা করেছেন তিনি। এই বই পড়তে গিয়ে মনে হবে, আপনি এমন একজন শাইখের আলোচনা শুনছেন, যিনি কখনো আত্মশুদ্ধির নসিহত করছেন তো কখনো ঈমান জাগানিয়া হৃদয়গ্রাহী বয়ান করছেন। কখনো মোটিভেশনাল লেকচার দিচ্ছেন। আর এইসব আলোচনাকে তিনি যেনো একসূত্রে গেঁথে দিচ্ছেন। আর তা হচ্ছে, রবের সাথে আপনার বন্ধন। এই বন্ধন যতো দৃঢ় হবে, রবের প্রতি সুধারণা ততো সংহত হবে। আর আপনি এর স্বর্গীয় স্বাদ উপভোগ করে ধন্য হবেন। তখন দুনিয়ার এইসব বিপদ-মুসিবতকে থোড়াই মনে হবে।
* বইটি কনেো পড়বনে? কিভাবে আপনি পরীক্ষাকে পুরস্কারে পরিবর্তন করবেন? বিপদের নিয়ামত থেকে কিভাবে উপকৃত হবেন? যেকোনো পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সফলভাবে জীবনযাপন করবেন? পরিস্থিতি যা-ই হোক সবকিছুতে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি কিভাবে পোষণ করবেন? কিভাবে আল্লাহর সাথে নিখাদ সম্পর্ক তৈরি করবেন; যার ফলে তাকেই শুধু ভয় করবেন, তাঁর কাছেই প্রার্থনা করবেন? কিভাবে দৃঢ় মনোবল ও অনমনীয় প্রাণশক্তির অধিকারী হবেন? তাকদিরের বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য করা থেকে কিভাবে নিজের অন্তরকে পবিত্র করবেন; যে নির্ভেজাল অন্তর নিয়ে আপনি রবের সাথে মিলিত হওয়ার কামনা করতে পারবেন? সর্বোপরি আপনার রবকে কিভাবে নিঃশর্ত ভালোবাসবেন; যে ভালোবাসায় কোনো ভেজাল নেই, যে ভালোবাসা অপরিবর্তনীয় অম্লান? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এবং আরও বহু বিষয়ের সমাধান আশা করি পাঠক এই বইয়ে পাবেন।
ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভুত ড. ইয়াদ কুনাইবী বড়ো হয়েছেন জর্দানের রাজধানী আম্মানে। ছাত্রজীবন থেকে পড়াশোনায় মেধার স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি সাহিত্যাঙ্গনেও ছিল তার সপ্রিতভ পদচারণা। ১৯৯৮ সালে তিনি জর্দান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ফার্মেসিতে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। কৃতিত্বের ধারা অব্যাহত রেখেই স্নাতোকত্তর শেষে ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হিউস্টন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের গবেষনা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন ‘pharmacology’ বিভাগে। ২০০৩ সালে এই বিভাগ থেকে প্রথম স্থান লাভ করে সুনামের সাথে PHD সম্পন্ন করেন। এর পরপরই বিশ্ববিখ্যাত টেক্সাস মেডিকেল সেন্টারে তৎকালীন সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের সাথে গবেষনামূলক কাজে অংশগ্রহনের বিরল সুযোগ লাভ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিজের প্রতিভার উজ্জল স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃৎ ‘সাইয়্যিদ কুতুব শহীদের’ মাধ্যমে ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার প্রতি ঝুকে পড়েন। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে যেমন তার বেশ কিছু গবেষনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনই দ্বীনি দাওয়াতের ময়দানেও তিনি তার মেধা ও উম্মাহদরদি মানসিকতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি ও তার সঙ্গীগণ বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে মুসুল্লীদের মাঝে দ্বীনি দাওয়াত চালাতেন প্রথম দিকে। দ্বীনি দাওয়াতের পাশাপাশি তিনি ইলমে দ্বীনের একনিষ্ঠ ছাত্র হিসেবেও কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। শাইখ আব্দুর রহমান বিন আলী আল-মাহমুদের নিকট হাফস বিন আ’সিম রহিমাহুল্লাহর সনদে ইলমুল কিরাআত শিক্ষা করেন। একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে ওঠেন সালাফ থেকে নিয়ে সমকালীন বিশ্ববরেণ্য আলিমদের। আলিমদের ইলম ও সোহবতে তাফসীর, সীরাত, ফিকহ-সহ বিভিন্ন দ্বীনি শাস্ত্রে গভীর ব্যুৎপত্তি লাভ করেন তিনি। দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তিনি মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতি দ্বীনের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। তার দাওয়াতী কার্যক্রমে ইসলামের পক্ষে ও ক্রুসেডারদের বিপক্ষে জোড়ালো বক্তব্য উঠে আসতে শুরু করে। যার ফলে ২০১৫ সাল থেকে এ-পর্যন্ত চারবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে দুই বছরেরও বেশি সময় নবী ইউসুফের পাঠশালায় ছিলেন তিনি। হামলা, মামলা ও বন্দি জীবনের ভয় আদর্শের পথ থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি তাকে। রুখতে পারেনি দাওয়াতের ময়দানে তার পথচলা। আমরা আল্লাহর নিকট তার তার ক্ষুরধার লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে যেন উম্মাহ উপকৃত হতে পারে, সেই তাওফিক এবং তার নেক হায়াত ও সত্যের পথে অবিচলতা কামনা করছি।