মুখবন্ধ হ্যানিম্যান তার সমালোচকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন “তোমরা বারবার পরীক্ষা নিরীক্ষা কর.......... যদি যথাযথভাবে এবং সর্তকতার সাথে পরীক্ষা কর তবে, আমার মতাদর্শের সত্যতা সম্পর্কে তোমরা প্রতি ধাপে ধাপে নিশ্চিত হতে পারবে” (materia madica pura [MMP].vol.11.p.2)1. অনেক বাধা-বিপত্তি সও্বেও হোমিওপ্যাথি বিগত ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে অবিশ্বাস্য গতিতে সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরেছে। কিন্তু যখন আধুনিক সেমিনারগুলোতে কোন একটা নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য একটা নির্দিষ্ট ঔষধের পরামর্শ চাওয়া হয় তখন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হোমিও গবেষক, শিক্ষক, চিকিৎসকেরা বিভিন্ন মতে ভাগ হয়ে যায়। এই বিষয়টা সাধারণ মানুষ যারা হোমিওপ্যাথির তও্ব সম্পর্কে ততো বেশি ওয়াকিবহাল না তাদের কাছে হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে এক বিরূপ ধারণার জন্ম দেয়। অন্যদিকে হেরিং উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে একবার এক রোগীর রোগের ইতিহাস তার ৩৩ জন সহকর্মীর নিকট পাঠিয়ে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলেন এবং তাদের মধ্য ২২ জন মতামত দিয়েছিলেন। আনন্দের বিষয় এই যে তারা একই ঔষধের সাজেশন দিয়েছিলো। এটা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে সে সময় চিকিৎসকেরা কার্যকর ঔষধ বের করার জন্য অধিকাংশই ব্যাপকভাবে ও সর্বসম্মতিক্রমে একই কার্যপ্রণালী অনুসরণ করতেন। বর্তমান সময়ে হোমিওপ্যাথির সমালোচকেরা একটা বিষয় জোরালোভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করেন যে, হোমিওপ্যাথিতে রোগীর সমস্যা এক থাকলেও চিকিৎসকদের নির্ধারিত ঔষধের ভিন্নতা অনেক দেখা যায়। সহজ কথায় হোমিও চিকিৎসকগণ একই রোগীর সমস্যার জন্য ঐক্যমতের ভিত্তিতে একই প্রেসক্রিপসন করতে পারেন না। এই বিষয়টা হোমিওপ্যাথির অগ্রগতির পথে অনেক বড় বাধা। বিংশ শতাব্দীতে হোমিওপ্যাথি ঔষধ নির্বাচনের যেসব নতুন পদ্ধতি উপস্থাপিত হয়েছে তা পরিসংখ্যায়িতভাবে মূল্যায়িত হয়নি (Not statistically evaluated) । সুতরাং আমরা এইসব পদ্ধতিতে চিকিৎসায়িত রোগীর চিকিৎসা পরবর্তী পরিণতি (Tretment ovtcoms) সম্পর্কে বেশি জানি না। যদিও এই বিষয়টি একটা গ্রহণযোগ্য গবেষণার মাধ্যমে ও পরিসংখ্যানগত ভাবে আমাদের জানা দরকার। বর্তমানে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে হোমিওপ্যাথির অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে এই ধরনের স্টাডি বা গবেষণাধর্মী রোগী পর্যালোচনা অতি জরুরি। পোলারিটি এনালাইসিস (Polarity Analysis) পদ্ধতিটি বৈজ্ঞানিকভাবে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছিল। এটা একটা Doublc-blind study ছিলো, যেখানে অনেক সুইস (সুইজারল্যান্ড)শিশু, যারা মানসিক অস্থিরতার একটি রোগে (ADHD) ভুগছিলো তাদের উপর হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এবং প্লাসিবো(Placebo) প্রয়োগ করে তাদের অগ্রগতি (Outcome) পর্যবেক্ষণ করে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল।3 এই পদ্ধতিটির একটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ ছিল কিভাবে একটি সঠিক ঔষধ নির্বাচনের জন্য নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত উপাদানসমূহ কে (Reliable elements) বের করা যায়। 4,5,6 পোলারিটি এনালাইসিস পদ্ধতিটি বোনিং হৌসেনের বই Boenninghousen’s Therapeutic Pocketbook (TPB) এবং এর অতুলনীয় গ্রেডিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে Acute, Chronic এবং Multimorbid (বহুমাএিক) রোগের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রশ্নাবলীর (Questionnaires) চার্ট তৈরি করা হয়েছে এবং যার ফলশ্রুতিতে সঠিক ঔষধ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এই বইটির উদ্দেশ্য পাঠকদের কাছে পোলারিটি এনালাইসিস পদ্ধতিটি বিস্তারিত এবং বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা। এখানে আমরা অনেক ক্লিনিক্যাল কেস কিভাবে পোলারিটি এনালাইসিস পদ্ধতিতে সমাধান করতে হবে তা দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা পাঠকদেরকে ফ্রি ওয়েব ভিত্তিক পোলারিটি এনালাইসিস সফটওয়্যার দিচ্ছি (www.polarity-analysis .com) যেখানে তারা এই বইয়ে উল্লেখকৃত কেসসমূহ পর্যালোচনা ও প্র্যাকটিস করতে পারবেন। Boenninghousen’s working Group (BOWG)8 এই সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে। যখন আপনি পোলারিটি এনালাইসিস প্রক্রিয়ার মৌলিক বিষয় গুলো বুঝে যাবেন তখন প্রথমে আপনি Acute illness (module 1) দিয়ে রোগী দেখা শুরু করুন । এভাবে কিছু দিন প্র্যাকটিস করার পর যখন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তখন আপনি chronic illness চিকিৎসার জন্য Module 2 ব্যবহার শুরু করুন। এরপর আপনি সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন ক্ষেত্র যেমন- Hyperactive children (অস্থির শিশুদের) এবং multimarbid patients (বহুমাত্রিক রোগীদের) চিকিৎসার জন্য Modele 3 ব্যবহার করা শুরু করুন। সঠিক ও কার্যকর ঔষধ নির্বাচন করার জন্য আপনাকে দুইটি বিষয় গুরুত্বের সাথে সব সময় বিবেচনা করতে হবে-প্রথমত সঠিকভাবে এবং এই বইয়ে নির্দেশিত পদ্ধতিতে রোগী দেখতে হবে এবং দ্বিতীয়তঃ রোগীদের তাদের লক্ষণসমূহ বিশেষভাবে পোলার লক্ষণসমূহ কিভাবে checklist এবং Questionnaires থেকে উল্লেখ করতে হবে তা শিখিয়ে দিতে হবে। অগভীর (SUPERFICIAL) শারীরিক লক্ষণ হতে পোলার লক্ষণসমূহের কার্যকারিতা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনেকের কাছে Boenninghausen’s Therapeutie Pocket Book এর একটি দুর্বল জায়গা মনে হতে পারে যে এতে মাত্র ১৩৩ টি মেডিসিন আছে। এটা আসলে কোন দুর্বলতা নয়, বরঞ্চ সুবিধা, কেননা অনেক সংখ্যক অনির্ভরযোগ্য ঔষধ না নিয়ে, নির্ভরযোগ্য কম সংখ্যক ঔষধ নিয়ে কাজ করা অনেক দিক থেকে সুবিধাজনক । আমাদের কয়েক দশকের দীর্ঘ গবেষণা ও ক্লিনিকাল প্রাকটিস থেকে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আমাদের পূর্বসূরি হোমিওপ্যাথরা যারা প্রাথমিক পর্যায়ে হোমিওপ্যাথি নিয়ে কাজ করেছেন তারা বেশিরভাগ নির্ভরযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ আবিষ্কার করে গেছেন এবং যা দিয়ে তারা সফলভাবে চিকিৎসা দিয়েছিলেন। সুতরাং আমাদের মতে, এর বাইরে কদাচিৎই নতুন ঔষধ ব্যবহার করার প্রয়োজন পরবে। -ডাঃ হেইনার ফ্রে