আল-কুরআনুল কারীমের সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ভাষায় একটি নতুন ও মৌলিক অনুবাদ। এখানে চেষ্টা করা হয়েছে; যাতে ন্যূনতম পড়তে পারেন, এমন কেউ-ও এর থেকে উপকৃত হন। পাশাপাশি ভাষার মানকে এমন একটি উচ্চতায় রাখা হয়েছে, কুরআনের অনুবাদের ভাষার জন্য যা উপযুক্ত ও সমীচীন। অনুবাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন বিশুদ্ধ তাফসীর নজরে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলো- তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে কুরতূবী, তাফসীরে জালালাঈন, আইসারুত তাফাসীর, আত্-তাফসীরুল মুয়াস্সার, তাফহীমুল কুরআন, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন। কুরআনের যেসব শব্দ বা পরিভাষা বাংলাতেও একইভাবে প্রচলিত, সেগুলো অনুবাদ না করে মূল শব্দই রাখা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত শব্দের ক্ষেত্রে ব্র্যাকেটের মধ্যে অর্থ লিখে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ফুটনোটে টীকার মাধ্যমে অর্থ বা উদ্দেশ্য পরিষ্কার করা হয়েছে। পাঠকরা যাতে আয়াতের অর্থ পুরোপুরি বুঝে নিতে পারেন, সর্বাবস্থায় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ জন্য যেখানেই অর্থ বুঝে নিতে জটিলতা দেখা দেয়ার সামান্য আশঙ্কাও মনে হয়েছে, সেখানেই ব্র্যাকেটের মধ্যে সহজভাবে তা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, কুরআনের মূল কোনো শব্দ বা আয়াতের অর্থ ব্র্যাকেটের মধ্যে রাখা হয়নি। আবার বাড়তি সংযোজিত কোনো শব্দ বা বাক্য মূল অনুবাদের সাথে জুড়ে দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে ব্র্যাকেটে সংযোজিত বাড়তি শব্দসমষ্টি মূল বাক্যের সাথে মিলিয়ে পড়তে যেন অসুবিধা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। অনুরূপ, ব্র্যাকেটের শব্দসমষ্টি ছাড়াও যাতে মূল বাক্যের অর্থ বোধগম্য হতে পারে, সেদিকেও মনোযোগ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবী-রাসূলদেরকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে পুরো অনুবাদেই ‘আপনি’ ব্যবহার করা হয়েছে। কুরআনের যেসব স্থানে বিভিন্ন আকীদাসংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচিত হয়েছে, অনুবাদের সময় সেখানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদাকে সতর্কভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আসমা ওয়াস সিফাতের অনুবাদের বেলায়ও অনুরূপ। পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নিজের ক্ষেত্রে বহুবাচক সর্বনাম তথা ‘আমরা’, ‘আমাদের’ ব্যবহার করেছেন। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার একচ্ছত্র আধিপত্য, রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশালত্ব বিবেচনায় অনুবাদের সময় এসব স্থানে ‘আমি’, ‘আমার’ ব্যবহার করা হয়েছে। বস্তুত, আল্লাহর তাঁর নিজের ক্ষেত্রে এই যে বহুবাচক সর্বনামের ব্যবহার- এটি কোনোভাবেই কোনো কিছুতে তাঁর সাথে কেউ বা কারো অংশীদারত্বের সূচক নয়। এটি একান্তই তাঁর বিপুল ও বহুমুখী শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। তিনি একই সঙ্গে স্রষ্টা, রিযিকদাতা, লালন-পালনকারী, জীবন ও মৃত্যুদাতা। তিনি রাজাধিরাজ, পরাক্রমশালী ও সকল মর্যাদার আধার। কোনো কিছুই তিনি কারো সাহায্য নিয়ে করেন না। তাঁর সক্ষমতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সামষ্টিকতার দৃষ্টিকোণ থেকেই আল্লাহ তাঁর নিজের শানে এভাবে বহুবাচক সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। অনুবাদের ক্ষেত্রে আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও একক কর্তৃত্বের সম্মানে তাঁর জন্য একবচন সর্বনাম গ্রহণ করেছি।
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি থানার চরসীতা গ্রামে নিজ বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম হাফেয মাহমুদুল হাসান মাদানী, মাতার নাম রোকেয়া বেগম। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা (নরসিংদী) থেকে ২০০৩ সালে কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। দাখিল পরীক্ষার আগে-পরে কুরআন কারীমের হিফ্য সম্পন্ন করেন। ২০০৬ সালে সৌদি সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীয়া অনুষদে অনার্স (লিসান্স) কোর্সে ভর্তি হন এবং ২০১০ সালে এমফিল গবেষণায় নিযুক্ত হন। একই সাথে নিজ বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেন। তার গবেষণার বিষয় ‘তাহক্বীক্ব: হাক্বায়েক্বুল মানজুমাহ্ আন-নাসাফিয়্যাহ্’। আরবী থেকে বাংলায় তার অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, ‘আদর্শ মুসলিম’, ‘আদর্শ মুসলিম নারী’, ‘মহিলা মাসাইল’ ও ‘সহজ তাওহীদ’। ‘রিয়াদুস সালেহীন’র অত্র অনুবাদের পর তিনি ইতোমধ্যে কুরআন কারীমের সরল-সাবলীল অনুবাদও সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ইলমে দীনের উপর রচিত গুরুত্বপূর্ণ আরো বেশকিছু গ্রন্থের অনুবাদকর্মে তিনি নিয়োজিত আছেন।