১৩ই ডিসেম্বর ২০০১, ভারতের ন্যাশনাল পার্লামেন্টে হামলা করে পাঁচজন সশস্ত্র লোক। পাঁচজনই নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা হামলায় নিহত হয়। এখান থেকেই শুরু হয় চারজন নিরপরাধ ব্যক্তির রাজনৈতিক ও আইনী গোলকধাঁধায় ফেঁসে যাওয়ার গল্প। হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয় আফজাল, গিলানী, শওকত ও তার স্ত্রী নবজোতকে। এই চারজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাকে নিয়ে জলঘোলা হয়েছে তিনি আফজাল গুরু। আফজাল গুরু কী আসলেই হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন? নাকি তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে? অরুন্ধতী রায়ের কথায়, “এই বই যে পড়বে, সে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবে যে, আফজাল গুরুকে যে অপরাধের জন্য ফাঁসি দেয়া হয়েছে সেই অপরাধে তিনি দোষী সাব্যস্ত হননি।” তাহলে কী ভারত সরকার একজন নিরপরাধকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে? কী ছিলো আফজালের গল্পে? সন্দেহজনক তদন্ত ও বিচারিক ত্রুটি, মিডিয়া, সরকার সবাই আফজালকে পৌঁছে দিয়েছে মৃত্যুর কোলে। শুধুমাত্র “একটি ফাঁসির জন্য” ভারত সরকার, ভারতের জনগণ, বিচার ব্যবস্থা, মিডিয়া এবং তদন্তে নিয়োজিতরা কী নিকৃষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলো! আফজাল গুরুর ফাঁসি নিয়ে তৈরী হয়েছে হাজারটা প্রশ্ন। “একটি ফাঁসির জন্য” বইটিতে সেই প্রশ্নের অধিকাংশ উত্তরই পাঠক উপলব্ধি করতে পারবে।
বুকারজয়ী ঔপন্যাসিক, রাজনৈতিক লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও মাঠপর্যায়ের অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায়ের আলাপচারিতার সংকলন দানবের রূপরেখা। আলাপচারিতার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-২০০১-২০০৮। এর মধ্যে নির্ণীত হয়েছে বিশ্বব্যবস্থার নতুন রূপ, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিমানুষ প্রত্যেকেই প্রভাবিত হয়েছে নতুন ব্যবস্থায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা, আফগানিস্তান দখল, ইরাক যুদ্ধের সূচনার পাশাপাশি করপোরেট বিশ্বায়নের বিস্তার ঘটেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলে খ্যাত ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান, কৃষি, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের অধিকার হারানো, অহিংস আন্দোলনের কার্যকারিতা হারিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের বিস্তারও এ সময়ের ঘটনা। এই প্রসঙ্গগুলো নিয়েই কথা বলেছেন অরুন্ধতী রায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বর্ণবাদ ও ভারতে হিন্দু ফ্যাসিজমের পুনরুত্থান, পৃথিবীর অপরাপর দেশজুড়ে দুঃশাসন ও কর্র্তৃত্বপরায়ণতা, পরিবেশ বিপর্যয়, সাধারণ মানুষের অধিকার হ্রাস, নারীর ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি-বর্তমান বিশ্বের এই প্রবণতাগুলোও উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়। তাঁর সাহস, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতা আপনাকে ক্ষুব্ধ, উদ্বুদ্ধ আর আগ্রহী করে তুলবে।