করোনার পরিস্থিতি মোটামুটি শীতল হওয়ার পর । যেহেতু বইটি আসতেছে এই কারণে একই বইয়ের নাম। দুইটা রাখা হয়েছে । (প্রথমটা কেউ কিনে ফেললে তার জন্য দ্বিতীয়টি কিনার দরকার নেই) প্লিজ বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্য পোস্ট দিয়েছি ফেইসবুকে। আগামী শনিবার অর্থাৎ ১২/৯/২০ তারিখের মধ্যেই বইটি বাজারে আসবে ইনশাআল্লাহ। বৈশ্বিক মহামারি করোনা। কোন প্রকার হাতিয়ার ছাড়াই হাজার-হাজার, লাখ-লাখ, কোটি-কোটি,অগণিত-অসংখ্য মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে প্রাণ কেড়ে নেয় যে রোগ তার নাম মহামারি। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা, এক দেশ থেকে অন্য দেশ এবং পর্যায়ক্রমে তা দেশ থেকে মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিশু, কিশোর, আবাল-বনিতা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব, দুর্বল-পালোয়ান সকলেই এই মাহামারির সম্মুখে কুপকাত। এটি একটি অদৃশ্য শক্তি। এই অদৃশ্য শক্তি চর্মচোখে দর্শন করা অসম্ভব। আজ সবাই অসহায়।সমস্ত পরাশক্তি আজ পরাহত। মহামারি রহমাত না আযাব-এটি একটি ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু বিশ্বের প্রযুক্তির কারীগর ইউরোপ মহাদেশও আজ বিপযর্স্ত। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতায় দাপুটে রাষ্ট্র আমেরিকা আজ অসহায়ের মত কাতরাচ্ছে।পরিত্রাণের কোন উপায় নেই তাদের হাতে। কি বলে নিজ জনগণকে শান্তনা প্রদান করবেন; সে ভাষাও তাদের জানা নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানও অসহায়। মহামারির এই প্রকোট মুহূর্তে যারা চিকিৎসা সেবা প্রদান করে মানুষকে একটু হলেও শান্তনা প্রদান করবেন, তারাও আজ আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যদের মত তারাও লাশের সারিতে যুক্ত হচ্ছেন । আবার কোন কোন দেশে শুনা যাচ্ছে, চিকিৎসকরা নিজে নিরাপদে থাকার জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করে বাড়িতে গিয়ে উঠছেন। চিকিৎসা সেবার জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট, ভেন্টিলেটার ও অন্যান্য উপাদানসহ ওষুধপাতি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না এখন।এক কথায় মানবশক্তি আজ সম্পূর্ণভাবে আসহায়। পরিচ্ছন্নতার মহাযুদ্ধ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সমগ্র বিশ্ব এখন জোর দিচ্ছে পরিচ্ছন্নতার উপর। ব্যক্তির দেহ থেকে শুরু করে আসবাব-পত্র, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লা, দেশে-মহাদেশ এখন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ব্যস্ত। যুদ্ধের দামামা এখন আর নেই। এমনিতেই থেমে গেছে সবকিছু। অদৃশ্য এক শক্তির সাথেই এখন যুদ্ধ করছে সবাই। - লিন্তু কেন হয় এই মহামারি? পৃথিবীর সূচনা থেকে মহামারির নানা ইতিহাস রয়েছে। লাখ-কোটি মানুষের প্রাণ চলে গেছে এই মহামারিতে। বিভিন্ন নবিদের যুগে মহামারির কথা বর্ণিত আছে। মূলত সত্যের আহবান যখন মানুষ অবজ্ঞা করে, তাচ্ছিল ভরে তা প্রত্যাখ্যান করে, সত্যের অনুসারীদেরকে নির্যাতন-নিপিড়ন করে এবং অসত্য প্রতিষ্ঠার জন্য হারামের ছড়াছড়ি হয় তখন আসে মহামারি। স্রষ্টার বিধানকে অবজ্ঞা ও পরিহার করা, অবিচার, কপটতা, ধোকাবাজী, অন্যায়, রাহাজানী, লুন্ঠন, হত্যা, যেনা-ব্যাভিচার, নারীর সম্ভ্রমহানী, অশ্লীলতা বৈধ করণ, সুধ-ঘুষের স্বাভাবিক প্রচলন, ক্ষমতার দাপটে মিথ্যাকে সত্য, সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করণ এবং মজলুমদেরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারাগারের শৃংখলে আবদ্ধ রেখে নির্যাতন-নিঃস্পেষণ ইত্যাদি যখন পৃথিবীতে সাভাবিকভাবে চলতে থাকে তখন পৃথিবীটা শয়তানের রাজত্বে পরিণত হয়। শয়তানের এই রাজত্বকে ভেঙ্গে দিতেই আসে মহামারি। মানবদৃষ্টি যেন বুঝতে পারে, নিজের অনুভূতি শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে এবং বিশ্বাসের সাথে ঘোষণা করে, ‘বিশ্বজগতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আমাদের ক্ষমতা খুবই সামান্য ও সীমিত পরিসরে।তাঁর প্রেরিত বিধি-বিধানই একমাত্র জীবনব্যবস্থা। আমরা তা পরিহার করে অন্যায়-অপরাধ করেছি ।এবং আমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে।’ - মহামারির প্রকোপে মানুষ এখন তটস্ত। মহামারি কী,কেন, মহামারির ইতিহাস, পূর্ববর্তীদের উপর মহামারি কেন আবির্ভূত হয়েছে, তারা তখন নিজেদেরকে কীভাবে রক্ষা করেছেন, ইসলালি যুগের মহামারি, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহামারি সংক্রান্ত হাদিস, সাহাবা-তাবেয়িদের যুগে মহামারি ও তাদের ঈমানি অবস্থান, বিভিন্ন সময়ের মহামারির নানান চিত্র, মানব ক্ষয়ক্ষতি, আধুনিক যুগে মহামারি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, মহামরি সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক সমস্ত মাসআলা-মাসায়িল ও বিধি-বিধান পর্যালোচনা এবং সমাকালীন মহামারি করোনা ও তার থেকে পরিত্রাণ লাভ ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা এখন সময়ের দাবী। মহামারির এ সকল বিষয় নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ মূলক গ্রন্থ রচনা করছেন মিশর আল-আযহারে ইসলামিক ল্য বিভাগে অধ্যায়নরত মুফতি আবুল ওয়াফা শামসুদ্দিন আযহারী। মহামারির প্রত্যেকটি বিষয় তিনি কুরআন-হাদিস, নিজ গবেষণা ও আসলাফদের কিতাব থেকে সুনিপুণভাবে চুল-ছেড়া বিশ্লেষণ করেছেন। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত মহামারির ইতিহাস, মহামারির সময় চিকিৎসা পদ্ধতি, শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে মহামারি চলাকলীন সময়ে করণীয়-বর্জনীয়,মহামারি সংক্রান্ত মাসআল-মাসায়েল ও আহকাম, ইসলামে স্বাস্থ সচেতনতা, মহামারির সময় মানুষের সমাজিক দায়বদ্ধতা,বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের নির্যাতনের চিত্র ও তার বিশ্লেষণ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ তার এই গ্রন্থে উঠে এসেছে। গ্রন্থকার মুফতি আবুল ওয়াফা শামসুদ্দিন আযহারী পূর্ণ বইটি প্রনিধানযোগ্য রেফারেন্স দিয়ে সর্বোচ্চ গ্রহণ যোগ্যতা সৃষ্টি করেছেন। আধুনিক যুগের প্রিন্ট ও এলিক্ট্রনিক মিডিয়া থেকে অগণিত তথ্য সংগ্রহ করে তিনি বইটিতে যুক্ত করেছেন। আমাদের জানা মতে মহামারি সম্পর্কে বাংলা ভাষায় এটিই প্রথম, একক ও মৌলিক গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে রয়েছে, পাঁচটি অধ্যায় এবং প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে অসংখ্যা পরিচ্ছেদ। যে কোন পাঠক খুব দ্রুত ও অতি সহজেই তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খুঁজে পাবেন এবং উপকৃত হতে পারবেন।ইনশাআল্লাহ। - মুফতি আবুল ওয়াফা আযহারী গ্রন্থটির নামকরণ করেছেন, “কুরআন-হাদিসের আলোকে বৈশ্বিক মহামারি ও সমকালীন করোনা”। নামের মাধ্যমে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, এই গ্রন্থটি শুধু বর্তমান করোনাভাইরাস-এর আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যেই সীমবদ্ধ নয়। বরং সামগ্রীকভাবে মহামারি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে। পৃথিবীর শুরু থেকে সকালীন প্রায় সব মহামারি নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে বইটিতে। তাছাড়া বর্তমান করোনাভাইরাস সম্পর্কে বিশ্বের সকল দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা তো থাকছেই। অর্থাৎ গ্রন্থটিতে একদিকে যেমন মহামারির ঐতিহাসিক রেকর্ড পর্যালোচনা করা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে বর্তমানে আলোচিত করোনাভাইরাসের চুল-ছেড়া বিশ্লেষণ এবং কুরআন-হাদিসের মানদণ্ডে ইসলামি পর্যালোচনা পেশ করা হয়েছেকরোনার পরিস্থিতি মোটামুটি শীতল হওয়ার পর।