ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে পৃথিবীর সকল বিচ্ছিন্নতাকে বিলুপ্ত করে বিশ্বময় ব্যাপকভাবে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করার জন্য। ইসলাম তার এই লক্ষ্যে সফল হয়েছে পারষ্পরিক শত্রুতার ভিত্তিতে বিভক্ত আরবের গোত্রগুলোকে ইসলামি জামা'আর বন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যমে। মুহাজির ও আনসারদের মাঝে এমন ভ্রাতৃত্ব জাগ্রত করে দিলো, যা বংশীয় ভ্রাতৃত্বকেও হার মানায়। কোন জাতির উন্নতি তখনই সম্ভব হবে, যখন সে জাতির সর্বস্তরের মানুষ একই লক্ষ্য ও কেন্দ্রে একীভূত হবে। এই লক্ষ্য ও কেন্দ্রকে অটুট ও স্থায়ী রাখাই হবে তাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। আর তখনই তাদেরকে একটি জাতি হিসেবে গণ্য করা হবে এবং ঐক্যের এই লক্ষ্য ও কেন্দ্রটাই হবে তাদের জাতীয়তার সূত্র। এভাবে কোন জাতির পতন ঘটে তখনই, যখন জাতীয়তার এই বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে সে জাতির প্রতিটি মানুষ এমনভাবে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে, যেন বাতাসের সামান্য ঝাপটা তাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। পানির উপর নকশা যেমন পরক্ষণে মুছে যায়, অনুরুপ মুসলমানদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া হাজারো ফেরকা উত্থানের পর পতিত হয়েছে। তবে যে দলটি অধিক ও ব্যাপকভাবে মুসলিম ভূখণ্ডের সিংহভাগজুড়ে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে তা হলো, “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ’হ”।
ভারত-উপমহাদেশে সিরাতচর্চা, ইতিহাস ও আরবিভাষার সাহিত্য নিয়ে যারা গবেষণামূলক কাজ করেছেন, কর্মগুণে হয়েছেন বিশ্ববরেণ্য—সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ. তাদের সবচেয়ে অগ্রসারির। ১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ-ভারতের বিহারের দিসনাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিশ্ববিখ্যাত নদওয়াতে পড়াশোনা করে সেখানেই দীর্ঘ দিন আরবিভাষার পাঠদান করেন এই প্রাজ্ঞ প্রতিভাধর; পাশাপাশি ছিলেন আন-নদওয়া আরবি পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ও সম্পাদনার পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ, প্রদান করেছেন পৃথিবীখ্যাত সিরাত-বিষয়ক ভাষণ—খুতুবাতে মাদরাজ নামে যা বিশ্ববিখ্যাত। সিরাতুন নবি (যুগ্ম), সিরাতে আয়েশা, আরদুল কুরআন, খৈয়ামসহ যা-ই তিনি লিখেছেন, সেটিকেই করে তুলেছেন পাঠ-অনিবার্য। এসব আকরগ্রন্থ তাকে এনে দিয়েছে অমরত্বের মর্যাদা। তার লেখা ইতিহাসের পাণ্ডুলিপিগুলো শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা পার হয়ে হৃদয়কেও স্পর্শ করে প্রবলভাবে।