হেমেন্দ্রকুমার যখন বাংলা কিশোর সাহিত্যে আসেন, তখন তার আসন রীতিমতো পাকা। কলম ধরেছেন স্বয়ং রবি ঠাকুর-তা ছাড়া উপেন্দ্রকিশোর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকুমার রায়, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, যোগীন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখের কলমে কিশোর সাহিত্য নবদিগন্ত স্পর্শ করছে। তাঁরা লিখেছেন ছড়া, কবিতা, রূপকথা, ঐতিহাসিক, সামাজিক গল্প, হাসি-মজার গল্প। কিন্তু অভাব ছিল রহস্য- রোমাঞ্চসিক্ত কিশোর সাহিত্যের, যাকে বলা যেতে পারে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির। এই অভাব বোধ করেছিলেন অনেকেই। এবার সেই স্থান পূর্ণ করলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়। আর এমন ভাবে করলেন, তা হয়ে রইল বাংলা সাহিত্যের চিরকালীন সম্পদ। ‘মৌচাক’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে তাঁর প্রথম কাহিনি প্রকাশিত হল- ‘যকের ধন’। ১৯২৩ সালে। সব বাঙালি ছেলেমেয়েরা বিমল, কুমার, রামহরির সঙ্গে চলল আসামের জঙ্গলে। পরে পরেই এল ‘মেঘদূতের মর্ত্যে আগমন’ আর ‘ময়নামতীর মায়াকানন’। আর যায় কোথায়? জনপ্রিয়তাতে তিনি তুঙ্গে উঠে গেলেন। বাকি সব কিছু ছেড়ে মন দিলেন কিশোরসাহিত্য রচনাতে। কাজেই বাংলার অ্যাডভেঞ্চার সাহিত্যে তাঁকে একেবারে ‘পথিকৃৎ’ বলা খুব ভুল হবে না। ঠাকুরদাদা মারা গেলে পর, তাঁর লোহার সিন্দুকে অন্যান্য জিনিসের সাথে পাওয়া গেল এক বাক্স। সেই বাক্সের ভেতর পাওয়া গেল শুধু একটি পুরনো পকেট-বুক আর... একটা মড়ার খুলি! ঠাকুরদাদার কি অদ্ভুত খেয়াল। এতদিন ধরে সিন্দুকে একটা মড়ার খুলি যতœ করে রাখা! কি অদ্ভুত রসিকতা! কিন্তু আসলেই কি তাই? জঞ্জাল ভেবে ফেলে দেয়া মড়ার খুলি চুরি করতে আসলো কে? এতদিনের পুরনো খুলি আর সেই সাধারণ কথা লেখা পুরনো পকেট-বুক নিয়ে শুরু হল কলকাতা থেকে আসাম পর্যন্ত পদে পদে বিপদে মোড়া দারুন এক অভিযান। বাঙ্গালীর ঘরের সাধারন ছেলেরা কি পাবে সেই আদি রাজার গুপ্তধনের সন্ধান?
জন্ম ১৮৮৮, কলকাতা। সাহিত্যচর্চার শুরু মাত্র ১৪ বছর বয়সে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। খেয়ালি জীবন, ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহিত্য সংস্কৃতির নানান স্রোতে। ‘ভারতী’ গােষ্ঠীর সাহিত্যিক হিসেবেই প্রথম পরিচয়। ‘বসুধা’ পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। বহু গান লিখেছেন, নাচ শেখাতেন, নাটকও লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন নাটক বিষয়ক সাময়িকপত্র ‘নাচঘর’। পরবর্তী সময়ে সম্পাদক ছিলেন ছােটদের বিখ্যাত পত্রিকা রংমশাল-এরও। কিশাের সাহিত্যের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। লিখেছেন অজস্র বই। বয়স্ক পাঠকদের জন্য কাব্য-অনুবাদে ‘ওমর খৈয়ামের রুবায়ত’ বা ছােটদের জন্য ‘যকের ধন, ‘দেড়শাে খােকার কাণ্ড’, ‘ঝড়ের যাত্রী’, ‘কিং কং’ সমান আদৃত। বিখ্যাত প্রবন্ধের বই ‘বাংলা রঙ্গালয় ও শিশিরকুমার। জীবনাবসান ১৮ এপ্রিল ১৯৬৩।