অমর একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী শিল্প-সাহিত্য, বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ ও বিশ্ব-রাজনীতি নিয়ে ব্যাপকভাবে লেখালেখি করলেও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালকে নিয়ে তিনি খুব কমই লিখেছেন। শেখ কামাল একজন লড়াকু যুবক ছিলেন। মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে তিনি ঘাতকের গুলিতে নিহত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে যে নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় শেখ কামাল ছিলেন সেই রাতের প্রথম শহীদ। তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করার মাধ্যমেই শুরু হয়। পঁচাত্তরের আগস্ট ট্র্যাজেডি। শেখ কামাল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি ক্রীড়া-অনুরাগী, সংগীতপ্রিয়, রাজনীতিসচেতন ও দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আর্মি থেকে ওয়ার টাইম কমিশন পেয়েছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এ.জি. ওসমানীর এডিসি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতে ‘আবাহনী’ একটি উজ্জ্বল নাম। আবাহনী’ শেখ কামালের হাতে গড়া একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামাল। আজ বেঁচে থাকলে কী হতেন? এমন প্রশ্ন জনমতে ওঠতেই পারে। কেননা বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী এই মহান মানুষটি অনেক কিছুই হতে পারতেন। মুজিব-পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহচর আবদুল গাফফার চৌধুরী এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন শেখ কামাল আজ যদি বেঁচে থাকতেন শিরোনামের নিবন্ধে। অসমসাহসী, বীর গেরিলাযোদ্ধা শেখ কামালের নামাঙ্কিত নিবন্ধের। প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ কামাল আজ যদি বেঁচে থাকতেন গ্রন্থের নামকরণ করা হয়। শেখ কামালের প্রসঙ্গ ছাড়াও এই গ্রন্থে আরো আছে বঙ্গবন্ধু-স্বাধীনতা, শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব-রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্নীতিসহ বেশ কিছু বিষয়। এই গ্রন্থের আরও একটি উল্লেখযোগ্য। বিষয় হলো চারটি মূল্যবান স্মৃতিচারণ। সব মিলিয়ে শুধু এটুকুই বলা যায়, এই গ্রন্থের প্রতিটি লেখাই পাঠককে ঋদ্ধ করবে।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।