সব শুরুরই একটা পরিসমাপ্তি থাকে। সেটা সফল হােক কিংবা অসফল । শুরু করেছিলাম সেই আট বছর আগে খেলার ছলে । বলেছিলাম যা দেখেছি তাই লিখেছি। লেখাটা যে অনেক সময় দেখাকে ছাড়িয়ে যাবে এটি কল্পনা করিনি। আসলে যতই অকিঞ্চিৎকর হােক প্রত্যেক মানুষেরই জীবনের কিছু বিশেষ দিক থাকে যা সম্বন্ধে সে কেবল নিজেই জানে । ফলে আজ যা ভাবছি তা যদি কাল লিখতে যাই তখন মনে হবে কোনােটা বুঝি অনুল্লিখিত রয়ে গেল । সেই জন্য সব ভুলে যাবার আগে ঝটিতি কিছু কথা বলে আমার জীবনের এই পর্বের কাজটি শেষ করতে চাই । আমার প্রথম বইয়ের নাম ছিল সেই অরুণােদয় থেকে। সঙ্গত কারণেই এবারের বইটির নামকরণ হলাে মধ্যাহ্ন, অপরাহ্!' অপরাহ্লাে পৌঁছে গেলে জীবনটা যেদিকে ইঙ্গিত করে সেই সাঁঝের বেলা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভালাে। যারা আমার বয়সি তারা জানবেন আমি কেন এ কথাগুলাে বললাম । প্রৌঢ়ত্ব পেরিয়ে গেলে মনটা বড় বেশি স্মৃতিনির্ভর হয়ে। পড়ে এবং তখনি দেখা দেয় সব উটকো ঝামেলা । বুদ্ধিমত্তার ওপরে, প্রয়ােজন ছাপিয়ে দেখা দেয় আবেগের আধিক্য । এইটি সকলে এড়িয়ে যেতে পারেন না কেননা জীবনের পাঁচ কিংবা সাত যুগ পেরিয়ে এলে ওই সময়গুলাে মনে হয় যেন নিজেরই দেহ-মনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে। আমি নতুন কিছু বললাম না । নতুন কিছু বলার সাধ্য। আমার নেই, অত বড় মাপের চিন্তক কিংবা লেখক আমি নই। তাহলে বলছি কেন এসব কথা? বলছি এই কারণে যে জীবনটা তাে আমার । তাই জীবনটাকে যেমন দেখেছি আমি তেমনি তাে লিখবাে? কিন্তু আমার সুহৃদরা চাইবে এইটা একটু বেশি করে লিখি, ওইটা একটু কম। এটা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। আসল সত্য এই যে সবাইকে সব সময় খুশি করা যায় না । আমি জানি আমি যা ভাবছি তা সত্য নাও হতে পারে তবুও যা ভাবছি। তা তাে আমারই ভাবনা? সে কারণে আমাকে ওইভাবেই বলতে হবে। একটা সুবিধে এই যে কথাগুলাে আমাকে নিয়ে আমার কথা। অতএব, এই স্বাধীনতাটুকু বােধহয় নেয়া যেতে পারে ।
(জন্ম: ৬ই নভেম্বর, ১৯৪৪) একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী অভিনেতা যিনি টেলিভিশন নাটক ও মঞ্চ নাটকে সমান জনপ্রিয়। তিনি একই সাথে দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আলী যাকের বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক এমসিএলের কর্ণধার। তিনি বাংলাদেশের কালের কন্ঠ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। তাঁর সহধর্মিনী সারা যাকেরও একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী। আলী যাকের ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাভিশনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ভালোবাসার বাংলাদেশ উপস্থাপনা করেন। ১৯৭২ সালের আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন যার প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে। ১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। ঐ দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন যার প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ওয়াপদা মিলনায়তনে । ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস নাটকটিতে যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশী নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা এসব কাজে আলী যাকের ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ঐ দলে যোগ দেন সারা যাকের যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি আলী যাকেরের। একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে তাকে তৈরি করার চরিত্রটার জন্য এবং খুব দ্রুত চরিত্রটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের। ১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়।