"স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু প্রাসঙ্গিক ভাবনা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বাঙালির জাতীয় জীবনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় গৌরব ও অহঙ্কারের আর কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ, সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমাদের ধারাবাহিক স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। একটি নিরস্ত্র জাতি সশস্ত্র যােদ্ধায় পরিণত হয়েছিল একজন নেতার বজ্রকণ্ঠ আহ্বানে। কীভাবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার রক্তপতাকা বাঙালি জাতির হাতে তুলে দিলেন তা বিস্তারিত জানা খুবই জরুরি। আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাস বিকৃত করার একটি অপচেষ্টা বঙ্গবন্ধু-হত্যা পরবর্তী সময় থেকেই চলে আসছে। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যেমন ছিল দেশবাসীর ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য, তেমনি স্বাধীনতাবিরােধী, ষড়যন্ত্রকারী কিছু সংখ্যক বাঙালি কুলাঙ্গারও ছিল পাকিস্তানিদের সক্রিয় সহযােগী। এসবই আমাদের ইতিহাসের অনুষঙ্গ।। ‘স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু : প্রাসঙ্গিক ভাবনা' গ্রন্থটিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সামরিক কাঠামাে এবং আরাে নানা খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর এমন নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে আলােকপাত করা হয়েছে যা সত্যানুসন্ধানী হতে পাঠকদের আগ্রহকে উস্কে দেবে। গ্রন্থটির রচয়িতা এইচ টি ইমাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে দেখেছেন অত্যন্ত কাছ থেকে এবং এর নির্মাণ প্রক্রিয়ায়ও শরিক থেকেছেন সরাসরি। ইতিহাস যারা তৈরি করেছেন, তিনি তাঁদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভের সুযােগ পেয়েছেন। ইতিহাসের সঙ্গেই তিনি পথ চলেছেন। ইতিহাস তাকে সঙ্গে নিয়ে চলেছে। এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান পাঠককে নিঃসন্দেহে নিয়ে যাবে ইতিহাসের এমন সব বাঁকে, যেখানে অন্য কারাে নজর দেওয়ার সুযােগ নেই। তাই খণ্ডিতচিত্র নয়, পূর্ণতার স্বাদ পাওয়া যাবে এই গ্রন্থটিতে। গ্রন্থভুক্ত একুশটি রচনার প্রতিটিতে যেমন রয়েছে সাধারণের অজানা নতুন তথ্য, তেমনি রয়েছে প্রতিটি রচনার পৃথক বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য এইচ টি ইমাম দেশের রাজনীতির মােড় পরিবর্তনকারী ঘটনাসমূহ এবং এর কুশীলবদের অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পূর্ণ করে তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য শ্রমসাধ্য এই গ্রন্থটি রচনা করে তিনি একটি বড় জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু : প্রাসঙ্গিক ভাবনা' গ্রন্থটি।
৬০-এর দশকে পূর্ববাংলার রাজনৈতিক অবস্থা তাঁকে ক্ষুব্ধ করে। সরকারের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত থাকায় তার চোখে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও সামরিক প্রশাসকদের শােষণ, বৈষম্য, বঞ্চনার রূপ প্রকট হয়ে ওঠে। ৭১-এর ভয়াল পঁচিশে মার্চ রাতের সংবাদ পাওয়ার আগেই দেশের সংকটজনক পরিস্থিতির কর্মপন্থা নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে যােগাযােগ করে সংকট মােকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আহ্বানে পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রশাসনের পদ থেকে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে যােগদান করেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন। বিজয়ের অব্যবহিত পর বাংলাদেশের বিপর্যস্ত প্রশাসন-ব্যবস্থা সচল করে তােলা এবং দেশ পুনর্গঠনের কাজে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অন্যান্য সহকর্মী এবং মন্ত্রিবর্গের সঙ্গে তিনি নিয়ােজিত ছিলেন। এই দায়িত্বে সাড়ে ৪ বছরে তিনি স্বাধীন। সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, করপােরেশন ইত্যাদির রূপরেখা তৈরি ছাড়াও পাকিস্তান। আমলের পুরাতন নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির আমূল সংস্কারে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বহু প্রবন্ধের রচয়িতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর বেশকিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি সংগঠন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এইচ. টি. ইমাম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর এবং অসংখ্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।