"মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আমার মনে আছে- এই দিনলিপি আমি শুরু করি ১৯৭১-এর ৩রা মার্চে। ডায়েরিতে লেখা আছে- ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি মিটিং স্থগিত করার কারণে আওয়ামী লীগ সেদিন সারাদেশে হরতাল ডেকেছিল। সেই দিয়েই শুরু। ডায়েরি লেখাও শেষ হয়েছে ১০ জানুয়ারি তারিখে যেদিন বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তন করেন দুপুর ২:১০ মিনিটে রয়াল এয়ারফোর্সের একটি প্লেনে। তারপর বেশ কটা বছর চলে গেছে। ভুলেই গিয়েছিলাম ডায়েরির কথা। ২০০১ সালের এক দিনে আমার এক ছােট ভাই ডায়েরিটা দেখে অবাক হয়ে যায় আর আমাকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করে ওটা ছাপানাের জন্য। সংবাদ পত্রিকায় তখন হাসনাত ভাই (আবুল হাসনাত)। কথাটা তাঁকে জানাতেই উনি বলেন, ওটা লিখে পাঠিয়ে দিতে। ঠিক পরের বছরেই লিখাটা সংবাদে ছাপান শুরু হয়ে যায়। বছর ধরেই চলে প্রতিক্রিয়াও হয় কিছু। তবে ১৯৭১ সাল আর আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ঐ সময়কার ঘটনাপ্রবাহ আজকের মানুষের মনে কতটা দাগ কাটবে সেটা নির্ভর করবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ দেশের আপামর জনসাধারণ অত্যন্ত উৎসাহ সহকারে যেভাবে আত্মস্থ করেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এই দিনলিপির ঘটনা ভিন্নধর্মী হওয়ায় সবার মনের কোণে জায়গা করে নেবে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ অনেক শঙ্কা-আশঙ্কার মধ্য দিয়েই ১০টি মাস এই ডায়েরিখানা যক্ষের ধনের মতাে আকড়ে রেখেছিলাম যাতে করে একদিন সেটা সবার কাছে পৌছে যায় লিখিত আকারে। শেষ পর্যন্ত আজ সেটা প্রকাশিত হলাে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের এই ডায়েরিখানা ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল। সেটিরই বঙ্গানুবাদ মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি এই গ্রন্থটি।