গ্রীড সম্পর্কে সাধারণ ধারণা না থাকলেও অনেকেই সংবাদপত্রে গ্রীড পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এটা নির্দিষ্ট শিরোনাম বিভিন্ন কলামে বিভক্ত এবং সারিবদ্ধভাবে সাজানো যদিও গ্রীড পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য কিন্তু ডিজাইন সম্পর্কিত ধারণা ব্যতিত গ্রীডের ব্যবহার একে সংকুচিত করে ফেলে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই ডিজাইন থাকে সাধারণত উপেক্ষিত অথবা স্বল্প বিবেচনা প্রসূত, যার ফলে সংবাদপত্রগুলো দেখতে হিজিবিজি লাগে। নিউইয়র্ক ‘হেরাল্ড ট্রিবিউন’ পত্রিকা তাদের বিশেষ সংখ্যার অথবা বিশেষ সংবাদ পরিবেশিত প্রধান দৃষ্টিকটূ সাজান থেকে নিবৃত্ত থাকত। পিটার পালঝো একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার। বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য প্রমোশানেল ডিজাইনের ক্ষেত্রে তিনি ১৯৬০ দশকে ‘হেরাল্ড ট্রিবিউন’ পত্রিকার রবিবাসরীয় সংখ্যা এক নতুন ডিজাইন সংযোজন করেন। তিনিই প্রথম উল্লেখ করেন যে, গ্রীড সংবাদপত্র শিল্পে কেবলমাত্র পাতা তৈরির ক্ষেত্রে গঠনমূলক আদর্শ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। পিটার পালঝোর ডিজাইন তৈরি ছবি পছন্দ, অঙ্কন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নাটকীয় ব্যবহারের মাধ্যমে সংবাদপত্র ডিজাইনের ক্ষেত্রে একটা নবজাগরণ এনে দেন। যদিও এ ডিজাইনে ‘হেরাল্ড ট্রিবিউন’ আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তবুও সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন সাময়িকীর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। ১৯৩২ সালে স্ট্যানলে মরসিন ‘লন্ডন টাইমস’-এ ডিজাইনের ক্ষেত্রে এক নতুন পরিবর্তন আনেন এবং রোমান টাইমস উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি টাইপোগ্রাফীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটান। তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটান হয় টাইপোগ্রাফী গথিক পদ্ধতির; পুরাতন ইংরেজি টাইপোগ্রাফীর পরিবর্তে রোমান টাইমস অক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটে টাইপোগ্রাফীর পরিবর্তন। এই বিশেষ কারণে বর্তমান শতাব্দীতে এটা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু পরিবর্তন দেখা যায় সংবাদপত্রের চেয়ে বই এবং ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে টাইমস রোমান বেশি ব্যবহার হয়। সংবাদপত্র ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে, সামগ্রিকভাবে কিছুই এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র বিশেষ তাৎপর্যবাহী কিছু পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা যায়। গ্রীড ব্যবহারে সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কি পরিবর্তন এসেছে তাও আলোচনা করা হবে। অনেক বৎসর যাবৎ সংবাদপত্রের কলামগুলো খুব ঠাসাঠাসি করে বসানো হতো এবং শিরোনামগুলি ছিল খুব ছোট এবং সরল রেখায় আবদ্ধ। ১৯৩০ সালের দিকে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে এবং ধীরে ধীরে আড়াআড়িভাবে সংবাদ পরিবেশন হতে থাকে। শিরোনামগুলো অপেক্ষাকৃত বড় হতে থাকে। এক সময় কলাম-এর পরিবর্তে ভার্টিক্যালভাবে সাজানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হতো এবং সেটাকেই আধুনিক সংবাদপত্রের ডিজাইন বলা হতো। কিন্তু কোন একটির পরিবর্তে বাস্তবে দুই ধরনের ডিজাইন মিশে থাকত। লন্ডনের ‘সানডে টাইমস’-এর সম্পাদক হ্যারল্ড এভান্স তাঁর বই ‘এডিটিং ডিজাইনে’ কলাম রুল-এর পরিবর্তে বলেছেন, কলামগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব কমপক্ষে এক পাইকা হওয়া উচিৎ। সম্প্রতি সংবাদপত্রগুলো সরু কলাম-এর প্রতি অনীহা প্রকাশ করছে। ষষ্ঠ দশকে বিশিষ্ট সংবাদপত্রগুলো পুরানো নিয়মে বের করত; কিন্তু তারপর থেকে অনেক সংবাদপত্রই ছয় কলামে নামিয়ে আনল। কলামের সাথে সাথে টাইপেরও পরিবর্তন হলো, আগের ৯ পয়েন্টের জায়গায় ৭-৮ পয়েন্টের সাইজে নেমে এলো। খুব সহজভাবে পড়ার জন্য ১৫ পাইকা দূরত্বের ক্ষেত্রে ৯ পয়েন্টের সাইজ ধরা হত। যেখানে ৪৫টি অক্ষর সন্নিবেশিত করা যায়। শিরোনাম তৈরির ব্যাপারে সম্ভবত সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। সাধারণ সংবাদপত্রের মেকআপ-এ সরু কলাম-এর মধ্যে ডিসপ্লে করা হতো যা খুব ঘন ছিল। ডেকার নামে একটি পদ্ধতি ছিল, যা কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত ছিল এবং ক্রমান্বয়ে মূল বিষয়ে চলে যেত। এসব ক্ষেত্রে শিরোনামগুলো বড় অক্ষরে লেখা হতো। ১৯৩০ সালের দিকে উপর নীচ লাইনে শিরোনাম লেখা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়, যা বাম দিকে দুই অথবা ততোধিক কলামে বিস্তৃত থাকত। আজকাল শিরোনামের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিরই ব্যবহার হচ্ছে। অবশ্য অনেক পত্রিকায়ই প্রায় প্রতিটি শব্দের শুরুতে বড় অক্ষর ব্যবহার করা হয় যাকে আমরা ড্রড লেটার বলি, যাতে পড়তে খুব সুবিধা হয়। এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে, কে সংবাদপত্রের ডিজাইন অথবা মেকআপ এর ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে ডিজাইনের উন্নয়ন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রীডের কি ভূমিকা বা অবদান থাকতে পারে তাই বিবেচনা করা।
১৯৪৯ সালে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কবি। তাঁর চিত্রকলা বিষয়ক গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ, জীবনবোধ বিষয়ক কবিতা সুধী সমাজে ইতোমধ্যে সমাদৃত । তাছাড়া চিত্রকলার ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী বিষয় ও জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, যা সহজেই মানুষকে স্পর্শ করে যেমনটি তাঁর লেখা ও কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংবাদপত্রে কাজ করার কারণে তাঁর নিয়মিত ছবি আঁকার বিষয়টি হয়ে ওঠেনি। তথাপি সময় পেলেই ছবি আঁকার চর্চাটি অব্যাহত রেখেছেন। ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম এককচিত্র প্রদর্শনী তৎকালীন শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্ট ইনস্টিটিউটে। তারপর কর্মজীবনে প্রথমে দৈনিক ইত্তেফাক, মর্নিং নিউজ, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, পাক্ষিক আনন্দ বিচিত্রা তারপর দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টে শিল্প সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি শুধু ছবিই আঁকেননি, কাঠ মেটালের ম্যুরাল, টেরাকোটা ও মোজাইক ম্যুরাল নির্মাণসহ বইয়ের প্রচ্ছদ, নাটক ও সিনেমার অসংখ্য ডিজাইন অংকন করেছেন। তিনি যমুনা মাল্টিপারপাস ব্রিজের ডিজাইন কনসালট্যান্ট ছিলেন। তিনি নেদারল্যান্ডস সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রাফিক ডিজাইন, ফটোগ্রাফি ও ম্যানেজমেন্টের ওপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। টেক ইন্টারন্যাশনাল-এর মাধ্যমে লিডারশিপ অন সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট, প্রফিটেবল নেগোসিয়েশন ও সুপারভাইজরি ম্যানেজমেন্টের উপর আন্তর্জাতিক সনদ লাভ করেন। সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলোর ডিজাইন তাঁর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যেমন ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড হেলথ ইত্যাদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর রচিত গুরুত্বপূর্ণ বইগুলির নকশা তাঁরই করা। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে সংবাদপত্রের ডিজাইন, চিত্রকলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাজার বছরের ঢাকার চিত্রকলা, ঢাকাই মসলিন, বিস্ময়কর আরব চিত্রকলা এবং ছড়ার বই কত কথা কত মজা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে তাঁর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হওয়ার পথে। এর মধ্যে মহুয়া মলুয়ার দেশে, চিরায়ত চিত্রশিল্পী ইত্যাদি। সৈয়দ লুৎফুল হকের এই বইগুলি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া আগামী প্রজন্মের কাছে চিত্রকলা, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সম্যক ধারণা দেবে বলেও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। ডক্টর মুস্তফা মজিদ।